সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর নামে তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে ১৯৯৪ সালে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। ছয় ক বিশিষ্ট একটি একতলা ভবনের সবচেয়ে বড় কটি সংস্কার করে জাদুঘরে রূপান্তর করে বসু ফাউন্ডেশন। যার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ড. ইঞ্জিনিয়ার এম. এ কাশেম। জাদুঘরের সামনে রয়েছে বিজ্ঞানীর আব মূর্তি। জাদুঘরে রয়েছে বিজ্ঞানীর কয়েকটি পোট্রেট। পরিবারের সদস্যদের পোট্রেট। রয়েছে তাঁর আবিস্কৃত যন্ত্রপাতির ছবির ফটোকপি এবং হাতে আঁকা ছবি। তাকে নিয়ে লেখা রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, স্বামী বিবেকনন্দ, আইনস্টাইন, জর্জ বার্নাড শসহ মনিষীদের লেখা চিঠির ফটোকপি। তাঁর হাতের লেখা পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি। বিভিন্ন বরেণ্য ব্যক্তিদের সাথে তাঁর ছবির ফটোকপি রয়েছে। এগুলে জাদুঘরের মাঝখানে কাচ ঘেরা টেবিলে সাজানো রয়েছে। জাদুঘরটি স্কুল চলাকালীন সময়ে খোলা থাকে। বর্তমানে জদুঘরটি বিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ জাদুঘরটির নাম জাতীয় জাদুঘরের তালিকায় লিখা রয়েছে।
বর্তমানে এ জাদুঘরটি স্বেচ্ছায় দেখাশোনা করছেন বিদ্যালয়ের শিক সুমন্ত রায়। তিনি প্রতিবেদককে জানান, আমরা জাদুঘরটিকে সম্পূর্ণ সরকারীকরণের জন্য দাবী জানাচ্ছি। এর সমৃদ্ধিকরণ করে পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তর করা প্রয়োজন, কারণ প্রতিদিনই দেশ বিদেশের বহুলোক জাদুঘরটি পরিদর্শনে আসেন। বিভিন্ন সময়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ জাদুঘরটি পরিদর্শন করে বিভিন্ন রকম প্রতিশ্র“তি দিলেও তার বাস্তবায়ন কখনো হয়নি। জাদুঘরে বিজ্ঞানীর আবিস্কৃত সরাসরি কোন যন্ত্রপাতি নাই। যা রয়েছে সবই প্রতিলিপি। এর রণাবেণের জন্য বেতনভূক্ত সার্বণিক কর্মকর্তা-কর্মচারীও নেই। শ্রীনগর নিবাসী কবি মজিব রহমান জানান, এত বড় বিজ্ঞানীর বাস্তু ভিটায় তার নামে বিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে অনেক বছর আগে। কিন্তু জাদুঘরটি রয়েছে অবহেলায়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ জাদুঘরের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকারের সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন অন্তত এটিকে টুরিস্ট স্পট হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে। স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেণ। তিনি উন্নত গবেষণাগার ও যন্ত্রী ছাড়াই স্বীয় মেধায় শতাধীক আশ্চর্যজনক যন্ত্র আবিস্কার করেছিলেন। এর মধ্যে বেতারযন্ত্র এবং গাছের প্রাণ আছে তা পরীা করে প্রমাণ করেন। তিনি পৃথিবীর প্রথম মাইক্রোওয়েভ আবিস্কার করেন যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। অথচ রাঢ়ীখালে তাঁর পৈত্রিক বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মনোমুগ্ধকর ও ছায়া-সুনিবিড় পরিবেশের কারণে জগদীশ চন্দ্র বসুর পৌত্রিক বাড়িটি এখন একরকম বলতে গেলে পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে। অবসরে অনেকেই রাজধানী ঢাকাসহ নানা জায়গা থেকে ছুটে আসেন বিজ্ঞানীর স্মৃতি সান্নিধ্যে অবকাশ যাপনের জন্য। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো পারিবারিক ভবনের একাংশ এখন বিজ্ঞান জাদুঘর হিসেবে পরিচিত।
বিজ্ঞানীর পারিবারিক বাড়িতে রয়েছে কয়েকটি পুরনো ভবনের পাশে তুলসী গাছের শ্বেত পাথরের বেদি। পাশে রয়েছে আম বাগান। ইন্সটিটিউটের শিকরা থাকেন ওই ভবনগুলোতে। পুরো বসু বাড়ির ২৫ একর ভূমিই স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্সটিটিউশনের। এছাড়া বসু বাড়িতে রয়েছে আটটি বড় বড় সুন্দর পুকুর। আর অধিকাংশ জায়গা জুড়েই নানা জাতের উদ্ভিদ। জগদীশ চন্দ্র বসুর এ বাড়িটিতে ১৯২১ সালে ইন্সটিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয়। আর কলেজ শাখা চালু হয় ১৯৯৪ সালে।
তার পিতা ভগবান চন্দ্র বসু ছিলেন ফরিদপুরের ডেপুটি মেজিস্ট্র্রেট, মাতা ছিলেন বামা সুন্দরী। ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কীর্তিমান এ বিজ্ঞানীর কোনো সন্তান ছিল না।