সাগরের ঢেউগুলো প্রবালের গায়ে আঘাত লেগে পায়ের কাছে আছড়ে পড়ে। স্বচ্ছ জলের তলায় দেখা যায় বালুর স্তর। ভাগ্য ভাল হলে পেয়ে যেতে পারেন হরেক রকম মাছের ছুটোছুটি। এখানে বিস্তীর্ণ বালুকা বেলায় ছুটে বেড়ায় হাজারো লাল কাঁকড়ার দল।
ইনানী বিচ যেমন সুন্দর আর আকর্ষণিয় ঠিক তেমনই রোমাঞ্চকর কক্সবাজার হতে যাত্রা পথটি। একদিকে মেরিন ড্রাইভিং আরেকদিকে সাগর আর পাহাড়, ঝরনার নৈর্সগিক দৃশ্য। বোরিং তো প্রশ্নই আসে না। ভাগ্য ভাল থাকলে নায়ক নায়িকাদের পথিমধ্যে শুটিং আপনার আনন্দকে দ্বিগুণ করে দেবে। যারা হৈ হুল্লোড় পছন্দ করেন, বন্ধুদের নিয়ে উল্লাস করতে ভালবাসেন তাদের জন্য খোলা ছাদের জিপ উত্তম বাহন ইনানী যাবার জন্য।
ইনানী সৈকতের প্রধান আকর্ষণ প্রবাল আর পাথর। প্রায় প্রতিটা পাথরই নানা আকার আর ধরণের। কত বছরের পুরনো সে পাথর! আর তাতে মিশে আছে কত স্মৃতি! আপনি যদি টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে ইনানী সৈকতে যান তবে যাবার পথে আপনার দু চোখ জুড়িয়ে দেবে উঁচু উঁচু পাহাড় আর উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ। শুধু চোখই জুড়বে না, বরং পুরো সময়টা আপনি থাকবেন এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতায়। এক পাশে পাহাড় আরেক পাশে সাগর। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবেন? মন যে দু দিকই দেখতে চাইবে।
ক্ষিপ্রগতিতে যখন জিপ ছুটে চলে খোলা জিপের উপর দাড়িয়ে দুপাশে তাকালে মনে হবে যেন স্বপ্নে দেশে ভেসে যাচ্ছেন। এটি হতে পারে আপনার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। পথে লাল রংয়ের স্কুল ড্রেস পরা ছেলেমেয়েদের দেখবেন। আর দুপাশে থাকবে সাগর পারের গাছপালা। এরপর বেশ উঁচু একটা ব্রীজপার হয়ে শুরু হবে হিমছড়ির রাস্তা। রাস্তার একপাশে থাকবে উঁচু পাহাড় আরেক পাশে সাগর। নানা রকম পাখির কলতান শুনতে শুনতে আপনি রোমাঞ্চিত হবেন। এই রাস্তাটি সেনা বাহিনীর তৈরি করা। যাবার পথে পার হতে হবে সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প।
পাহাড়ে নানা রকম ঝোপঝাড়ের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র সৈকত পাড়ে দেখা যায় ঝাউ গাছের দীর্ঘ সারি। মাঝে মাঝে নারিকেল গাছের এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা সৌন্দর্যের ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করে। জায়গায় জায়গায় দেখবেন পাহাড়ি ছোট ছোট ঝরনা। শুকনা মৌসুমে হয়তো সবটাতে পানি দেখবেন না। পথে গাড়ি থামিয়ে ঝরনার পারে ঘুরে আসতে পারেন। রাস্তার ওপর পাশে সাগর। মাঝে মাঝে দেখবেন জেলে নৌকা বালির উপর সারি করে রাখা আছে।
ইনানী যেতে হবে অবশ্যই জোয়ার ভাটার হিসেব করে। কেননা জোয়ারের সময় গেলে সৈকতের এসব প্রবাল পাথর দেখা যাবে না। তাই যেতে হবে কিন্তু ভাটার সময়। খুব সকাল সকাল যাওয়াই ভাল। তাতে সুযোগ হাত ছাড়া হবার সম্ভাবনা কম থাকবে এবং দুপুরের ভেতর ফিরে আসতে পারবেন।
গন্তব্যে পৌঁছার পর আপনার মুখ থেকে একটা শব্দ বের হবে-‘ওয়াও’। এ বীচ টা কক্সবাজার মেইন বীচ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সাগর পাড়ে বালির উপর বিস্তীর্ণ জুড়ে ছড়িয়ে আছে শত শত বছরের পুরাতন পাথর। সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাথরের উপর। আর আপনি যদি পাশে থাকেন ধরে নিতে হবে আপনার সমুদ্র স্নানের জন্য সাগর আগেই অর্ধেক প্রস্তুত করে নিয়েছে আপনাকে। গোসল না করে ফিরে আসতে মন চাইবেনা।
যেভাবে যেতে হবে: ইনানী এবং হিমছড়ি কিন্তু একই ভ্রমণে ঘুরে আসা যায়। সময় আর খরচ তাতে বেঁচে যাবে অনেক। সকালে গিয়ে বিকেলের মধ্যেই বেড়িয়ে আসা যাবে দুটি জায়গা থেকে। কক্সবাজার কলাতলী সৈকত লোকাল জিপে যাওয়া যায়। একটি জিপে ১০-১৫ জন অনায়াসেই ঘুরে আসা যায়।