ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ, মুন্সিরহাট, চিলারংসহ আশেপাশের ৭টি গ্রামের ৭ শতাধিক নারী এখন হাতের কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। শাড়ীতে জরি ও পুথি বসানোর কাজ করে সংসারের অভাব ঘোচানোর পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন এইসব নারীরা। সাংসারিক কাজ করেও ফাঁকে ফাঁকে এই কাজ করছেন তারা। শুধু তাইনয়, অভাবী সংসারে জন্ম নেয়া অনেক শিক্ষার্থী যাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়েগেছে তারাও যুক্ত হয়েছে এই শিল্পের সাথে। আবার স্বামী হারা অনেক নারী থেমে যাওয়া সংসারের চাকা ঘোরাতে তারাও নেমে পড়েছেন এই কাজে। এতে অনেকেই সংসারে সাচ্ছন্দ এসেছে। আর তাদের দেখে প্রতিদিনই বাড়ছে এই ধরণের কর্মীর সংখ্যা। শিবগঞ্জ এলাকার সুফি বেগম(২৮) স্বামী আবু সাঈদ ৪ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ২ মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে বিপাকে পড়েন। অভাবী সংসার হওয়ায় দু বেলা দুইমুঠো অন্ন জোগাড় করা তার জন্য কঠিন হয়ে পরে। পাশের প্রতিবেশীর এধরণের কাজ দেখে উৎসাহিত হয় সুফি বেগম। মাত্র ৫দিনে একটি শাড়ীর কাজ শেষ করে ৫শ টাকা আয় করেন। ধীরে ধীরে পথ চলা। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমে আজ অভাব জালানা দিয়ে পালিয়েছে। সুফি বেগম বলেন, সেদিন এই কাজ শুরু না করলে আজ হয়তো মানুষের কাছে হাত পেতে হলেও সন্তানের মুখে খাবার যোগাতে হতো। ওই গ্রামের চম্পা বেগম ও সাদিকা খাতুন। এজন মাদারগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম ও অন্য জন ৭ম শ্রেনীতে পড়ে। সংসারে অভাব থাকায় লেখাপড়া প্রায় সময় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তাই যুক্ত হয়েছে এই কাজে। তাদের মতো অনেক স্কুল ও কলেজের ছাত্রীরা এই কুটির শিল্পকাজ করে নিজের খেলাপড়ার খরচ যোগাচ্ছে। শীবগঞ্জের মামুনী বেগম বলেন, তার কাছ থেকে ৪শ নারী প্রতিদিন শাড়ী ও পুথি নিয়ে এই কাজ করছেন। আবার ৭দিনের মধ্যে কাজ শেষে শাড়ী জমা দিয়ে পরিশ্রমিক নিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতি সাপ্তাহে একজন নারী একটি শাড়ী নকশার কাজ শেষ করতে পারে। এতে মজুরী পায় ৫শ থেকে ৭শ টাকা। আর রোজার ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত এখন নারীরা। দম নেয়ার সময়ও পাচ্ছেন না তারা। তাদের নকশা করা এসব শাড়ী প্রতি সাপ্তাহেই চলে যায় রাজধানী ঢাকায়। সেখানে প্রতিটি শাড়ী বিক্রি হয় ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। দরিদ্র এই সব নারীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ঢাকার যুবক সোহেল খান। তিনি শাড়ীতে নকশার শীল বসিয়ে পাঠিয়ে দেন ঠাকুরগাঁওয়ের ওই নারী কর্মীদের কাছে। তারা সেই শাড়ী সংগ্রহ করে নিপুন হাতে জরি ও পুথি বসানোর কাজ করে। এই নারী কর্মীদের কাজ করা শাড়ী ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় পাঠাতে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। ভারতীয় শাড়ী হিসেবে গন্য করে পথিমধ্যে আটক করে রাখে আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মীরা।
তামান্না এন্টার প্রাইজের সত্বাধিকারী ঢাকার যুবক সোহেল খান বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে প্রায় সাত শতাধিক নারী এই কাজ করে বাড়তি আয় করছে। কিন্তু শাড়ী পরিবহনে জটিলতা থাকায় এই নারীদের কাজ করা শাড়ী ঢাকায় নেয়া যাচ্ছেনা। তিনি সংশি ষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে জোর দাবী জানিয়েছেন।
এধরণের শিল্পে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে পাশাপাশি দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে নারীরা।