ঢাকা: দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অব্যাহত অবরোধ কর্মসূচীতে দেশজুড়েই সহিংসতা বাড়ছে। পুড়ছে মানুষ ও সম্পদ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় যৌথ অভিযান শুরু করেছে। একই সাথে চালানো হচ্ছে চিরুনি ও ব্লক রেইড অভিযানও। প্রয়োজনে এসব অভিযানের পরিধি আরো বাড়ানো হবে। নাশকতার আশঙ্কায় রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা মতিঝিল, পল্টন, রমনা, শাহবাগ ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার আবাসিক হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো শুধু রাতেই নয়ম, দিনেও বন্ধ থাকছে বন্ধ হয়ে গেছে। ফুটপাত থেকে সরে গেছে হকাররা। পয়েন্টে পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা তল্লাশিও। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপাররা চলমান যৌথ অভিযানসহ সব ধরনের অভিযানই তদারকি করছেন। টানা অবরোধে হুমকির মুখে দেশের অর্থনীতি। আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। ইতিমধ্যে পেট্রোল বোমা, ককটেল ও আগুনে পুড়ে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। অগ্নিসংযোগ হয়েছে বিপুলসংখ্যক পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহনেও। এ অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে চলমান নাশকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে। তারপরও নানা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যগণ। পাশাপাশি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও চলমান আন্দোলনকে আরো জোরদার ও বেগবান করার ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় আরো বেশি নাশকতা ও সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, তুরাগ তীরে দ্বিতীয় দফা ইজতেমা শেষে তাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিরা ফিরে যাওয়ার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো সহিংস হয়ে উঠেছে। এ পেছনে জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত ক্যাডার, নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠির সদস্য ও ভাড়াটে অপরাধীরা জড়িত বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে। কারণ রাজনৈতিক ঘোলাটে পরিস্থিতি থেকে ফায়দা তুলতে জামায়াত-শিবির ও নিষিদ্ধ জঙ্গিরা ছদ্মবেশে ঢাকায় অবস্থান করছে। জঙ্গিরা চাচ্ছে নাশকতা তৈরির মাধ্যমে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কাড়তে। এ অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে রাজধানীর সকল আবাসিক হোটেল, মেস ও বস্তি এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজধানীর ব্যস্ততম বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের দোকান ও রেস্তোরাঁ পুলিশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে কোনো দোকান বন্ধ রাখতে বলেনি পুলিশ। মূলত থানা পুলিশ নিজ এলাকার নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা চিন্তা করেই ফুটপাতের দোকানগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। তাছাড়া নাশকতার আশঙ্কায় পুলিশের পরামর্শে রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোতেও নতুন করে কাউকে থাকতে দিচ্ছে না। তবে পুরনো পরিচিত কিছু লোকজনকে হোটেলগুলো থাকতে দিচ্ছে। তবে তা সংখ্যায় খুবই কম।
এদিকে যৌথ অভিযান প্রসঙ্গে ওই অভিযান সমন্বয়ক পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতেই বিভিন্ন জেলায় যৌথ অভিযান চালানো হচ্ছে। কখন কোথায় অভিযান চালানো হবে তা অভিযানের আগমুহূর্ত পর্যন্ত জনস্বার্থে গোপন রাখা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী অভিযান চালানো হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপারের চাহিদা অনুসারে যৌথ অভিযানে পুলিশ, আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, বিজিবি ও র্যাবের প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যগণ অংশগ্রহণ করছে। এর বাইরে আলাদাভাবে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও র্যাব।
অন্যদিকে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ জানান, যৌথ অভিযানের জন্য বিভিন্ন জেলায় বিজিবি ফোর্স পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতেও পর্যাপ্তসংখ্যক বিজিবি সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাছাড়া নাশকতা রোধে ও যানবাহনের চলাচল নিরাপদ রাখতে বিজিবি সদস্যরা তাদের টহলও অব্যাহত রেখেছে। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদা মোতাবেক আধঘন্টা থেকে এক ঘন্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে বিজিবি পাঠানো হবে।