ঢাকা: সংঘাত নয়,বরং সংলাপের মাধ্যমেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সমস্যা সমাধানে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন,সংসদে যেহেতু সরকারি দল সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো ধরনের অনুরোধ করেননি বলে দাবি করেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যে জিএসপি সুবিধা স্থগিতের পর সরকারি দলের নেতাদের সমালোচনার জবাবে শনিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তব্যে তিনি বলেন, বলা হয়েছে, আমি নাকি চিঠি দিয়ে এই সুবিধা বন্ধ করেছি। কিন্তু আমি কোনো চিঠি পাঠাইনি। বিরোধীদলীয় নেতার এই বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাতে থাকা ওয়াশিংটন টাইমসে খালেদা জিয়ার নামে ছাপানো একটি নিবন্ধের অনুলিপি তুলে ধরেন।
তা দেখে খালেদা জিয়া বলেন, এটা আমার নয়। এমন কোনো লেখা আমি পাঠাইনি।খালেদা জিয়া বলেন,তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহাল রেখেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। এসব কথায় কাজ হবে না। দেশের স্বার্থে,গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে নির্দলীয় সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন হতে হবে।
খালেদা জিয়া সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন,আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালে বাধ্য হবেন। বিএনপি কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে তিনি আবারও ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে আস্থা ও বিশ্বাসের কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এসেছিল, সেই আস্থার সংকট আরো বেড়েছে। আর এই আস্থার সংকট থাকবে ততদিন দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
গত সাড়ে বছরে স্থানীয় সরকারসহ সব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে সরকারের দাবি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের সময়েও স্থানীয় সরকার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছিল। কিন্তু সিটি নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়।
সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সব দল অংশ নেবে। দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের জরিপেও এসেছে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। কিন্তু সরকার এই পথ বন্ধ করে রেখেছে।
গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত চার সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি দাবি করে তিনি বলেন,“যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হতো তাহলে সরকারি দলের প্রার্থীদের জামানাত বাজেয়াপ্ত হতো সরকারকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন,আপনারা বরিশালে খুলনায় সিলেটে রাজশাহীতে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছেন, সেসব তথ্য আমাদের কাছে আছে। পুলিশ-র্যাব দলীয় ক্যাডারের মতো আচরণ করেছে।
আসন্ন নির্বাচনে প্রশাসনকে একচেটিয়াভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে রাখতে সরকার প্রশাসনে ব্যাপক হারে দলীয়করণ করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন,বহু কর্মকর্তাকে দলীয় স্বার্থে ওএসডি করা হয়েছে এবং করা হবে। দলবাজ ও অদক্ষ কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষ ও মেধাবীদের বাদ দেয়া হচ্ছে। এতে করে প্রশাসন অকার্যকর হয়ে পড়ছে। সাংবিধানিক পদেও দলীয় লোক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে সুশাসন চলে গেছে নির্বাসনে।
তিনি বলেন,পুলিশকে বিরোধী দল দমনের হাতিয়ারে পরিণত করে সরকার বাংলাদেশকে পুলিশি রাষ্ট্র বানাতে চায়। গুরুতর অপরাধ দমনের জন্য বিএনপি র্যা ব গঠন করলেও বর্তমান সরকার এই বাহিনীকে বিরোধী দলীয় নেতাদের দমনের কাজে ব্যবহার করে এর সুনাম নষ্ট করেছে বলেও খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন।
আসন্ন নির্বাচনে প্রশাসনকে একচেটিয়াভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে রাখতে সরকার প্রশাসনে ব্যাপক হারে দলীয়করণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন,বহু কর্মকর্তাকে দলীয় স্বার্থে ওএসডি করা হয়েছে এবং করা হবে। দলবাজ ও অদক্ষ কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে দক্ষ ও মেধাবীদের বাদ দেয়া হচ্ছে। এতে করে প্রশাসন অকার্যকর হয়ে পড়ছে। সাংবিধানিক পদেও দলীয় লোক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে সুশাসন চলে গেছে নির্বাসনে।
পুলিশকে বিরোধী দল দমনের হাতিয়ারে পরিণত করে সরকার বাংলাদেশকে পুলিশি রাষ্ট্র বানাতে চায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।ভারত প্রতিবেশী দেশ, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, তবে সেই বন্ধুত্ব হতে হবে পারস্পরিক স্বার্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ লেনদেনের মাধ্যমে। সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিকদের বিএসএফ-এর হত্যা ও নির্যাতন সুসম্পর্কে ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। সরকারের দুর্বল ভারতনীতির কারণে সীমান্তে এখনো বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধ হয়নি।
খালেদা জিয়া সংসদে বলেন, এটা আমার চিঠি নয়। আমি প্রমাণ দেখাতে পারি- কেউ কেউ বলে- আমার নামে একটি লেখা বিদেশি পত্রিকায় প্রচারিত হয়েছে।। আমি এমন কোনো লেখা পাঠাইনি।
জিএসপি সুবিধা স্থগিতে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযোগও নাকচ করেন বিরোধীদলীয় নেতা।তিনি জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে এই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে এর প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন খালেদা।
“ড. ইউনূসের অবস্থানের প্রতি আমরা দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করছি।ইউনূসের সঙ্গে সরকারের আচরণের নিন্দা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন,আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিসম্পন্ন জাতীয় ব্যক্তিত্বরা যদি দেশে মর্যাদা না পান, তবে দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়বে।
গ্রামীণ ব্যাংককে সরকার ধ্বংস করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।গ্রামীণ ব্যাংক ভেঙে ১৯ টুকরা করার সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত কমিশন, আমরা এতে স্তম্ভিত। যে প্রতিষ্ঠান দেশের নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, সে প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সরকার প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি।
রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলো ‘লুটপাটের’ পর এখন গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকার ‘ষড়যন্ত্র’ করছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা।সংসদে অশালীন ভাষা ব্যবহারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার হচ্ছে, তাতে নতুন প্রজন্ম আমাদের কাছে শিখছে, তা আমাদের তলিয়ে দেখা দরকার।
অশালীন ভাষা ব্যবহারের জন্য সরকারি দলকেই দায়ী করেন তিনি।বিরোধী দলকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, নবম জাতীয় সংসদের শুরতে সংসদ নেতা প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন, বিরোধী দলকে সংখ্যা দিয়ে বিচার করবেন না, ডেপুটি স্পিকার হবে বিরোধী দল থেকে। কিন্তু সেই প্রতিশ্র“তি রাখা হয়নি।
বিরোধী দলের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে গত চার বছরে, তা কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।আওয়ামী লীগ আজও ভিন্ন মত মেনে নিতে পারে না। বিরোধী দল সহ্য করতে পারে না।
গত ৩ জুন বাজেট অধিবেশন শুরুর প্রথম দিনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা অধিবেশনে যোগ দেন।এর আগে বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া সংসদের বাইরে জানালেও এবার সংসদেই তা করছে বিরোধী দল।