ঢাকা: সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোরিজম ২০১২’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া অধ্যায়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সন্ত্রাসবাদ দমনবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের মাটিতে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া, সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ ও ভারতের সহযোগিতা উন্নত ও সম্প্রসারিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ দমনে এ অঞ্চলের এক প্রভাবশালী অংশীদার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ও আন্তদেশীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। এতে আন্তদেশীয় সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশে তৎপরতা চালানো বা এখানে নিরাপদ আস্তানা তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে নাগরিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সামরিক কর্তৃপক্ষকে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
রিপোর্টে সন্ত্রাস মোকাবেলা বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পারিক সহযোগিতারও প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে এ কারণেও আঞ্চলিক পর্যায়ে সন্ত্রাসের বিস্তৃতি কম হয়েছে। উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে।
কান্ট্রি রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী, আইন শৃংখলা বাহিনী ও জনসাধারণের জন্য ‘সন্ত্রাসবাদ’ পর্যবেক্ষণ, চিহ্নিতকরণ এবং প্রতিরোধে যথাযথ ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে নেয়া কর্মসূচিকে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর কর্মকান্ড পরিচালনার এবং অভয়ারণ্যে পরিণত করার সুযোগ না দেওয়ার বাংলাদেশ সরকার তাদের প্রতিশ্র“তি রক্ষা করেছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এতদঅঞ্চলের বড় শক্তিদের বিশেষ করে ভারতের গভীর প্রভাব রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে কান্ট্রি রিপোর্টে। বলা হয়েছে, অতীতের সরকারগুলোর সময় আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসবাদের হুমকির যে সুযোগ সুষ্টি হয়েছিল, বর্তমান বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং ‘সন্ত্রাসবাদ’ মোকাবেলায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সুযোগ তা নস্যাৎ করেছে। এ ক্ষেত্রে উভয় দেশ তাদের আন্তরিকতার প্রমান ে রখেছে।
আন্তর্জাতিক ে ফারামেও সন্ত্রাস বিরোধী সহযোগিতায় বাংলাদেশ পরিপূর্ণভাবে সক্রিয় ছিল বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়, ২০১২ সালে বাংলাদেশ বৃহত্তর পরিসরে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি আইন পাশ করে। এছাড়াও বাংলাদেশ অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসবাদে অর্থযোগান সম্পর্কিত অপরাধের তদন্তসহ অপরাধ বিষয়ে তদন্তে সহায়তায় অনেকগুলো দেশের সাথে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের গ্লোবাল কাউন্টার টেরোরিজম ষ্ট্রাটেজি’র চার নীতির আওতায় সার্কের বিভিন্ন ’সন্ত্রাসবাদ’ বিরোধী প্রটোকলেরও অংশীদার বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট। এতে আরো বলা হয়েছে, এসবই বাংলাদেশকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ মোকাবেলায় সক্রিয় রাষ্ট্রগুলোর সারিতে এগিয়ে এনেছে।
সন্ত্রাসবাদে অর্থযোগান মোকাবেলায় বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এফএটিএফ’র (ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স) আদলে এতদঅঞ্চলের এশিয়া প্যাসিফিক গ্র“প অন মানি লন্ডারিং এর সদস্য বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংক ও তার গোয়েন্দা ইউনিট এসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতিমালা মেনে চলতে সরকারের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। এছাড়া এফএটিএফ’র নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারের গঠিত ইন্টারএজেন্সি কমিটি সন্ত্রাসবাদে অর্থযোগান সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট আইনের বিদ্যমান ’ফাঁকফোকর’ সংশোধনেও কাজ শুরু করেছে। উল্লেখ্য, এফএটিএফ ইউএনএনসিআর-এর ১২৬৭ ও ১৩৭৩ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের কিছু ঘাটতির বিষয় চিহ্নিত করেছিল।
মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় কৌশলগত যোগাযোগ’ কে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে এই যোগাযোগ কৌশলের ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাদ্রাসাগুলোকে নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে। বিজ্ঞান, অংকসহ সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত কারিকুলামে ন্যূনতম অসাম্প্রদায়িক শিক্ষার মান বজায় রাখতে ব্যবস্থা নিয়েছে। ধর্ম ম›ত্রণালয়, ন্যাশনাল কমিটি অন মিলিট্যান্সি রেসিস্ট্যান্স এন্ড প্রিভেনশন সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে সচেতনতায় ঈমাম ও ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের সাথে একযোগে কাজ করছে। বর্তমান সরকার এছাড়াও পুরুষ ধর্মীয় নেতাদের উগ্রবাদী বক্তব্যের বিরুদ্ধে নারীদেরকে কাজে লাগাতে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধাদি বিস্তৃত করেছে।
আইন ও শৃংখলা বাহিনী এবং সীমান্ত রক্ষা বাহিনী সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইন পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর করতে বিচার বিভাগ কাজ করছে, যদিও সাধারণতঃ সন্ত্রাসবাদ ও অন্য কিছু অপরাধ মামলায় খুবই ধীর গতিতে এগুচ্ছে বাংলাদেশ।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার স্থল, সমুদ্র ও বিমান বন্দরের বাড়তি নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে অব্যহতভাবে অংশগ্রহণ করছে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চিহ্নিত ক্ষেত্র গুলোতে পুলিশ ও আইনজীবিদের মধ্যে বৃহত্তর পরিসরে সহযোগিতা ও সরকারি আইনজীবিদের সহযোগিতায় দক্ষতা অর্জণে প্রশিক্ষণ ও কমিউনিটি পুলিশ গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীদের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ২০১২ সালে ‘ন্যাশনাল একাডেরি ফর সিকিউরিটি ট্রেনিং’ প্রতিষ্ঠা করেছে বলেও এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।