১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে তিনটি হত্যার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবুজবাগ এলাকায় বাসার মধ্যে ঢুকে ডাকাতি শেষে গৃহকর্মীকে হত্যা করে ডাকাতরা। তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও ধারণা করছে পুলিশ। তুরাগ নদী থেকে ২০/২১ বছরের এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়। একইদিন দারুসসালাম থানায় এক কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর দুলাভাইকে গ্রেফতার করা হয়।
১৩ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণখানের আজমপুরে সোনার দোকানের কর্মচারী উজ্জ্বল চন্দ্রকে হত্যা করে স্বর্ণ লুট করে ডাকাতরা।
১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি খুন হন। দুর্বৃত্তরা তাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে দুজনকে হত্যা করে নির্বিঘ্নে চলে যায়। এ ঘটনায় বাড়ির কেয়ারটেকার ও নিরাপত্তা প্রহরীসহ তিনজনকে আটক করে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় ৪৮ ঘন্টায় সব রহস্য উন্মোচিত ও খুনী গ্রেফতার হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানালেও চারদিনেও মূল মোটিফ জানতে পারেনি পুলিশ।
১০ ফেব্রুয়ারি হাতিরঝিলে মাটিচাপা থাকা এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়। মোহাম্মদপুরে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু ও খিলক্ষেতে ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হলেও পরিবারের দাবি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ট্রেন দুর্ঘটনার নাটক সাজানো হয়েছে।
৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় স্বামী পলাতক। নিহতের স্বজনের দাবি গৃহবধূকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানো হচ্ছে। একইদিন রাজধানীর ডেমরায় আড়াই বছরের এক শিশু হত্যার ঘটনা ঘটে। শিশুটির মা দাবি করেন তার দ্বিতীয় স্বামী শিশুটিকে হত্যা করেছে। পরে পুলিশী জেরার মুখে তিনি ও তার দ্বিতীয় স্বামী মিলে এ হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করে। ঘাতক সৎ বাবাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এদিন কামরাঙ্গীর চরে এক গৃহবধূ ও চা দোকানদারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। দুটি ঘটনায় স্বজনের দাবি তাদের হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ দুটি ঘটনাতেই অপমৃত্যুর মামলা দায়েল করে।
৬ ফেব্রুয়ারি কাফরুলে পানির ট্যাংক থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে সে নিখোঁজ ছিল।
৩ ফেব্রুয়ারি সেগুনবাগিচা চট্টলা হোটেল থেকে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের রাজনৈতিক উপদেষ্টা সাহেদ উদ দৌলা বিদ্যুতের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর এক সপ্তাহেও কোনো সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ। পরে ১০ ফেব্রুয়ারি মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারি মিজানুর রহমান নামে এক যুবককে যাত্রাবাড়িতে পিটিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
এদিকে রাজধানীতে জানুয়ারি মাসে ১৬ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। ফেব্রুয়ারির প্রথম পনেরো দিনেই ১৪ জনের করুণ মৃত্যু হয়েছে। মাসের প্রথম দিনে কাফরুলে বাসের নীচে চাপা পড়ে শিশু মুনতাহার মৃত্যু সবার মনে গভীর নাড়া দেয়। সাংবাদিক, দিনমজুর, সবজি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব পেশার মানুষই হয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার। অধিকাংশ ঘটনায় ঘাতক চালক আটক হয়নি। সর্বশেষ ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় রাজধানীতে শিক্ষার্থী, পুলিশ সার্জেন্টসহ ১৫ জন আহত হয়েছে।
জানুয়ারীর ঘটনা সুরাহা হতে না হতে ফেব্রুয়ারিতেও অব্যাহত রয়েছে স্বর্ণের দোকানে চুরি-ডাকাতি ও লুটের ঘটনা। ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইস্টার্ন প্লাজার গ্রাম বাংলা জুয়েলার্সে রহস্যময় ৫০০ ভরি স্বর্ণ লুটের ঘটনা ঘটে। ৩১ জানুয়ারি থেকে দোকান বন্ধ ছিল। ২ ফেব্রুয়ারি দোকান খুলে লুটের কথা জানান দোকান মলিক। ৬ ফেব্রুয়ারি রামপুরায় সুমন জুয়েলার্সে ৪০ ভরি স্বর্ণসহ সিন্দুক চুরির ঘটনা ঘটে। ১৩ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণখান কাঁচাবাজারে গোল্ড কিং জুয়েলার্সে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়। এতে ডাকাতরা ৭০ ভরি স্বর্ণ, নগদ ১৬ হাজার টাকা ও ৫০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে। বাধা দিতে গিয়ে দোকানের কর্মচারী নিহত হন। জানুয়ারিতে রাজধানীতে একাধিক দোকান থেকে প্রায় পনের’শ ভরি স্বর্ণ লুট হয়।
এদিকে জানুয়ারি মাসে একাধিক ঘটনায় ৪০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও ফেব্রুয়ারির পনেরো দিনেই ছিনতাই হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৬ ফেব্রুয়ারি এলিফ্যান্ট রোডে এনসিসি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ফেরার সময় দুই ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২২ লাখ টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। এদিন শেরে বাংলা নগরে বাসে ছিনতাইয়ের শিকার হয় তিন মাছ ব্যবসায়ী। যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা তিন জনের কাছ থেকে এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ৮ ফেব্রুয়ারি চকবাজারে ব্যাংক কাউন্টারের ভেতর থেকে প্রতারক চক্র কৌশলে ব্যবসায়ীর ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। সর্বশেষ ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বাড্ডায় ব্যবসায়ীর পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাই হয়। একইদিন পল্টন থানাধীন পলওয়েল মার্কেটের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় সন্ত্রাসীরা।
এসব টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার কোনো সুরাহা করতে পারেনি পুলিশ।
চলতি মাসে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে বাড়িতে ঢুকে হামলার ঘটনা। আহত হয়েছে গৃহবধূ থেকে শুরু করে শিশুরা। ১১ ফেব্রুয়ারি সুত্রাপুরে বাড়িতে ঢুকে দেবর-ভাবীকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। ১৩ ফেব্রুয়ারি মহাখালীতে বাবার কাছে চাঁদা না পেয়ে বাড়িতে ঢুকে শিশু নিশাদকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা।
এদিকে, ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে দাবি করে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার ইব্রাহিম ফাতেমী বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি সামাজিক কিংবা পারিবারিক কারণে সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটলে তাকে আমরা নগরীর অপরাধের মাত্রার মধ্যে আনি না।”