সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জোট সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সম্প্রসারিত জোট ও বিএনপির পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি দেওয়া হলো।’খালেদা জিয়া ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে আরো রয়েছে, এপ্রিল জুড়ে সারাদেশে বিক্ষোভ এবং কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি ও কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবিতে মে মাসজুড়ে উপজেলা ও থানা ঘেরাও। হরতালের ঘোষণা দেওয়ার আগে খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোলে নিয়ে ক্ষমতায় বসার কথা বলেন। তাহলে কি আমরা ধরে নেব প্রধানমন্ত্রীকে মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন কোলে করে ক্ষমতায় বসিয়েছিল।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নিজের আয়নায় নিজের মুখ দেখতে বলেন।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘এমন কিছু বলবেন না, যাতে জনগণ লজ্জা পায়। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তো এমনিতেই খারাপ। গত তিনদিন সরকার সবকিছু বন্ধ করে না দিলে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য হতো, অর্থনীতি ভালোভাবে চলত।’
‘বর্তমান সরকার মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকার। সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনপ্রিয়তার কথা বলেন। কিন্তু তিনি নিজে কিভাবে ক্ষমতায় এসেছেন, কিভাবে আসন পেয়েছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমরা জনগণের ভোটেই ক্ষমতায় যাবো।’
‘আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি গণতান্ত্রিক। সরকারি দলের লোকেরাই অস্ত্র নিয়ে, হকিস্টিক নিয়ে মিছিল বের করে। আর পুলিশ তাদের পাহাড়া দেয়। এটা কেমন গণতন্ত্র? সরকার কোনো দলের হয় না। কিন্তু এ সরকার জনগণের সরকার নয়, কেবল একটি দলের সরকার। তারা অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কথা বলে, যা কোনো সুস্থ রুচিসম্মত মানুষ বলে না। তারা আসলে অপরাধী ও কুরুচিপূর্ণ। আমি এসবের জবাব দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করতে চাই না।’
‘তারা (আওয়ামী লীগ) বিদেশি এজেন্ট, বস্তাভরা টাকা নিয়ে তারা ক্ষমতায় যায়। আমরা কারও এজেন্ট নই। কারও সাহায্য নিয়ে ক্ষমতায় যায় না, জনগণের ভোটই আমাদের শক্তি। ক্ষমতায় যাওয়ার আগে সরকার জনগণের কাছে বহু ওয়াদা করেছিল, কিন্তু পূরণ করেনি। বিএনপি তার দেওয়া ওয়াদা একটা একটা করে পূরণ করছে।’
‘বর্তমান সরকার রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভই ভেঙে ফেলেছে। রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ প্রশাসন, সংসদ ও বিচার বিভাগ। তার মধ্যে সংসদ আজ ঠুঁটো জগন্নাথ। ভারতের সঙ্গে যেসব গোপন চুক্তি হয়েছে সেগুলো সংসদে ওঠে না। সংসদে চলে গালিগালাজের মহড়া। স্পিকারের ভাষায় সংসদ এখন মাছের বাজার।’
‘রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সরকার রুদ্ধ করে দিয়েছে। কথা না শুনলে সংবাদপত্র্র ও টিভি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। মহাসমাবেশ সরাসরি সম্প্রচার করতে বাংলাভিশন, একুশে টিভি এবং এনটিভি সরাসরি সম্প্রচার করতে চেয়েছিল। সরকার অনুমতি দেয়নি। তাদের বলা হয়েছে টিভির লাইসেন্স বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই হলো সরকারের নমুনা। মিডিয়াকে সরকার ভয় পায়। কারণ মিডিয়া জনগণের কথা বলে।
‘এ সরকারের ক্ষমতা এ পর্যন্ত ১৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ সাগর রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। এখন আর এ হত্যার বিচার হবে না।’
‘এখন বিচার দুই ধরনের। আওয়ামী লীগের জন্য এক রকম এবং বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষের জন্য অন্যরকম। আওয়ামী লীগ হলে খুনির আসামিরাও মাফ পেয়ে যায়। এ পর্যন্ত তাদের সাড়ে সাত হাজার মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে। নির্যাতন বাড়ছে। বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে।’
‘যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, সব আলামত মুছে গেছে। নিজেরা আলামত মুছে ফেলে জনগণকে বলবেন আলামত মুছে গেছে তা হবে না।’
তিনি সাংবাদিকদের চলমান আন্দোলন প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, ‘আপনারা এগিয়ে যান। আমরা সঙ্গে আছি।’
‘গণমাধ্যমকে কথা বলার স্বাধীনতা দিতে হবে। বেডরুমের নিরাপত্তা দেওয়া যায় না। কিন্তু কূটনৈতিক হত্যা হয়েছে রাস্তায়, আপনারা রাস্তায়ও নিরাপত্তা দিতে পারছেন না। প্রতিদিন অসংখ্য খুন এবং গুম হচ্ছে। পুলিশেরও নিরাপত্তা নেই। কিছুদিন আগেও পুলিশকে গুলি করা হয়েছে। পুলিশের নিজেরও নিরাপত্তা নেই। জনগণকে নিরাপত্তা দেবে তারা কিভাবে। এসবের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের গুণ্ডা বাহিনী। তারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি করছে। আগে নিজের লোকের কাছ থেকে অস্ত্র নেন। জনগণকে নিরাপত্তা দেন।’