ইসলামের শেষ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ‘জাজিরাতুল আরব’ বা ‘আরব উপদ্বীপ’ এখন সৌদি রাজবংশের ‘সৌদি আরব’। বার্ষিক এ ইবাদতের আনুষ্ঠানিকতার শুরুর দিনে শনিবার এখন সৌদি আরবের উপদ্বীপের মক্কায় সমবেত মুসলিমরা ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে হাজির হচ্ছেন। ইসলামের কিবলা ‘কাবা’ এ মক্কা শহরে মসজিদুল হারামের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
সারা দুনিয়া থেকে বর্তমান সৌদি আরবে সমবেত লাখো মুসলিম শুক্রবার রাতে মিনা’র প্রান্তরে অবস্থান করেছিলেন। মক্কায় এরই মধ্যে সমবেত হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ও স্থানীয় ২৫ লাখের বেশি মুসলমান।
হাজিদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সৌদি সরকার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এ বছর হাজিদের সহযোগিতার জন্য এক লাখের বেশি নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করেছে দেশটি।
সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৭ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের জন্য এসেছেন। আর সাত থেকে আট লাখ সৌদি নাগরিক হজ পালন করছেন।
এত মানুষের একসঙ্গে জমায়েত হবার পরিস্থিতির মধ্যে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের জন্য সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ হলো যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া।
এমনকি কোনো বিশৃঙ্খলার আশংকা না থাকলেও সমবেত হাজিদের সাহায্য করা ও ভিড় সামলানোর জন্যও ব্যস্ত থাকতে হয় নিরাপত্তাকর্মীদের। পাশাপাশি কোনো অসুখ-বিসুখ যেন ছড়িয়ে না পড়ে, কিংবা তাঁবুতে আগুন অথবা খাদ্যে বিষক্রিয়ার মতো ঝুঁকি ঠেকানোর কাজেও নিরাপত্তাকর্মীদের দরকার পড়ে।
সব মিলিয়ে হাজিদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক নজরদারি করবেন নিরাপত্তাকর্মীরা। এবার সন্ত্রাসবিরোধী অনন্ত যুদ্ধ ও আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি নিরাপত্তার অংশ হিসেবে মক্কা ও মদীনায় সমবেত মানুষের সব মোবাইল ফোনের কলের ওপর নজরদারি ও চিহ্নিত করতে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
আজ ভোর থেকে তারা ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়ালমুল্ক (আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব জগতও তোমার)’ জোরালো উচ্চারণে মুখর করে তুলবেন আরাফাতের ময়দান।
সাতবার কাবা শরিফ তাওয়াফের পর পবিত্র হজের বিধান পালন করতে গতকাল শুক্রবার তারা মিনার উদ্দেশে রওনা হন। কেউ গাড়িতে চড়ে, কেউ বা পায়ে হেঁটে এ পথ পাড়ি দেন।
মুসল্লিরা আজ মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়ে জামাতে জোহরের নামাজ আদায় করবেন। হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ শুরু হবে তখনই। সেখানে তারা হজের খুতবা শুনবেন।
আরাফাতের ময়দানে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থানের পর তারা শয়তানের উদ্দেশে নিক্ষেপের জন্য ৪৯টি পাথর সংগ্রহ করতে মুজদালিফায় যাবেন। সেখানে রাতযাপন শেষে ফজরের নামাজ আদায় করে মিনায় ফিরে যাবেন। মিনায় এসে হাজিরা শয়তানকে পাথর ছোড়ার পর রবিবার পশু কোরবানি দেবেন।
পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে হাজিরা পবিত্র কাবা শরিফ আবারও সাতবার তাওয়াফ করবেন। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় ফিরে এসে আরো দুই দিন অবস্থান করে হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই হজযাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। আর এবারের বৃদ্ধির হার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত বছরের তুলনায় এবার এ সংখ্যা ৭২ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। গত বছর সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে এ সংখ্যা ছিল ৫৮ হাজার ৯০।
সাত বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৫ সালে ৪৪ হাজার ১২৫, ২০০৬ সালের (ওই বছরে দ্বিতীয় দফা হজ হওয়ায়) জানুয়ারিতে ৪৪ হাজার ১২৫ ও ডিসেম্বরে ৪৭ হাজার ৯৮৩, ২০০৭ সালে ৪৫ হাজার ৮০১, ২০০৮ সালে ৪৮ হাজার ৭৬৩ এবং ২০০৯ সালে ৫৮ হাজার ৯০ জন হজে গেছেন।
এবার সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ ৭৫ হাজার বাংলাদেশিকে হজের অনুমতি দিয়েছে। শনিবার পর্যন্ত পাওয়া খবরে সব বাংলাদেশি হাজীই নিরাপদে আছেন বলে জানা গেছে।