ধারণা করা হয়, ষষ্ঠ শতাব্দীর সময় থেকেই বামিয়ান উপত্যকায় এই দুই বুদ্ধমূর্তি ছিল।আন্তর্জাতিক বিরোধিতা সত্ত্বেও ২০০১ সালে তালেবানরা ওই বুদ্ধমূর্তি দুটো ধ্বংস করে ফেলে। আর এই মূর্তি দুটোকে ধ্বংস করতে তালেবানরা সেসময় গোলা, স্থল মাইন এবং বিস্ফোরক ব্যবহার করে। এরপর থেকেই মনে করা হতো যে চিরদিনের মতো হারিয়ে গেলো অনন্য সুন্দর ওই জোড়া বুদ্ধ।
কিন্তু না। চিরদিনের মতো হারিয়ে যাচ্ছে না বামিয়ানের জোড়া বুদ্ধ। আবারও পাহাড়ের গায়ে সেই আগের মতোই দাঁড়াচ্ছে জোড়া বুদ্ধ। জার্মান শিল্প ইতিহাসবিদ এবং স্থাপত্যবিদ বার্ট প্রাক্সেন্থলারের মতে, বুদ্ধের শরীরের অর্ধেক অংশ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। বার্ট বিগত আট বছর ধরে এই জোড়া বুদ্ধ মূর্তি নিয়ে কাজ করে আসছেন। তিনি এবং তার কর্মীরা এ পর্যন্ত ধ্বংসস্তুপ থেকে ৪০০ টন ইট পাথরের টুকরো এবং ভাস্কর্য দুটোর শরীরের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করেছে।কিন্তু শুধু ইট পাথরের টুকরো থেকে কিভাবে বুদ্ধমূর্তি দুটো বানানো সম্ভব? প্রাক্সেন্থলার বলেন, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক ভাষায় একে বলে ‘এনাসটাইলোসিস’। কিন্তু মজার বিষয় হলো বেশিরভাগ মানুষই একে এক প্রকার অদ্ভুত রোগ বলে মনে করে।’ এনাসটাইলোসিস একটি পরিচিত ভাষা। এথেন্সের সেই পার্থেনন মন্দির যেভাবে নির্মিত হয়েছিল এটাও অনেকটা সেই পদ্ধতিতে নির্মিত হচ্ছে। ভাস্কর্যের মূল অংশের সঙ্গে আধুনিক উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি হবে নতুন জোড়া বুদ্ধমূর্তি।
সাম্প্রতিক সময়ে, প্রাক্সেন্থলার এবং তার দল মূর্তিদুটো ঠিক যে স্থানে দাড়িয়ে ছিল তার পেছনে একটি সুরঙ্গ(টানেল) তৈরি করেছেন। আর এবিষয়ে প্রাক্সেন্থলার ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘বর্তমানে আমরা বুদ্ধের একেবারে উপরের অংশে। এখানে শুধুমাত্র একটি দেয়াল এবং একটি ছোট বসবার জায়গা আছে। কিন্তু এখন এখানে কোনো মাথা নেই। খুব দ্রুতই এখানে বুদ্ধের মাথা সংযোজন করা হবে।’
বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানের বামিয়ান চূড়ান্ত অর্থেই একটি গরীব প্রত্যন্ত অঞ্চল। জোড়া বুদ্ধ মূর্তির জন্য এই অঞ্চলে একসময় পর্যটকরা ভিড় করতো। বিগত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে যুদ্ধ-বিগ্রহ আর সহিংসতা লেগেই আছে। তালেবানরা মূর্তিদুটো ভেঙে ফেলার কয়েক বছর আগে থেকেই যুদ্ধ বিগ্রহের কারণে পর্যটকরা এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল। আর সেই মুখ ফিরিয়ে নেওয়া পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই জোড়া বুদ্ধমূর্তি পুনর্নির্মাণ করার এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
আফগানিস্তানের জনপ্রিয় প্রদেশিক গভর্নর হাবিবা সারাবির সহায়তায় এই প্রকল্পটি চলছে। এই প্রকল্পটি সম্পন্ন হবার ক্ষেত্রে হাবিবা আশাবাদী। কারণ বামিয়ান এখন আফগানিস্তানের সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি।
এবিষয়ে মানবাধিকারকর্মী আবদুল্লাহ হামাদি বলেন, ‘এই ফাঁকা জায়গাটা, যেখানে বুদ্ধমূর্তি দুটো এক সময় দাঁড়িয়ে ছিল, এটা তালেবানদের গোঁড়া মতাদর্শের কথা মনে করিয়ে দেয়। বুদ্ধ ধ্বংস হয়ে গেছে। এটা পুনরায় তৈরি করা যাবে কিন্তু এটা ইতিহাস হবে না। ভাঙা বুদ্ধই হলো ইতিহাস।’