রাজ্যটির পুলিশ মহাপরিদর্শক এস.এন সিং বার্তা সংস্থাটিকে জানান, ‘‘গত ১৯ জুলাই দাঙ্গার সুত্রপাত হওয়ার পর থেকে কোকড়াঝাড় জেলায় ১৬ জন নিহত হয়েছে। সিরাং জেলায় নিহত হয়েছে ৫ জন। মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে চারজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘দাঙ্গা কবলিত এলাকায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ওই দুই জেলায় অতিরিক্তি সেনা ও পুলিশ পৌঁছেছে।’’
দু’জন সংখ্যালঘু ছাত্র নেতাকে গুলি করার জের ধরে রাজ্যের বোদো সম্প্রদায় ও মুসলমানদের দাঙ্গার সূত্রপাত হয়। এ ঘটনায় চারজন বোরো সম্প্রদায়ের লোককে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এদিকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ধুবরি জেলায় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। জেলার গৌরিপুর, বিলাশিপাড়া, গোলকগঞ্জ এবং ছাপার এলাকার কোনো কোনো স্থানে পরিস্থিতি বুঝে কারফিউ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আসাম রাজ্য সরকার জানিয়েছে, দাঙ্গায় গৃহহারা হয়েছে কমপক্ষে ৬০,০০০ লোক। তাদের বিভিন্ন সরকারি আশ্রয় শিবিরে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষও খুলেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী নিলামনি সেন দেকা এবং রাজস্বমন্ত্রী পৃথিবী মাঝিকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের দায়িত্ব দিয়েছেন।
চলমান দাঙ্গার ষষ্ঠ দিনে মঙ্গলবার রাজ্যের রাজধানী গোহাটিমুখী একটি ট্রেনে আগুন দেয়া হয়েছে বোরোল্যান্ড আঞ্চলিক স্বশাসিত অঞ্চলের কোকড়াঝাড় জেলায়। এ খবর দিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই। এতে ট্রেনটির চারটি বগি পুড়ে গেলেও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
গত ৬ জুলাই সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের দুজন নিহত হয় অজ্ঞাতপরিচয় দুস্কৃতিকারীদের আক্রমণে। পরে গত ১৯ জুলাই দ্বিতীয় এক আক্রমণে নিহত হন দুই মুসলিম ছাত্রনেতা। পিটিআই জানিয়েছে তারা হচ্ছেন, অল বোদোল্যান্ড মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের মহিবুল ইসলাম এবং অল আসাম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সিদ্দিক শেখ। পরে পাল্টা হামলায় নিহত হন বোরো লিবারেশন টাইগার’র সাবেক দুই যোদ্ধা।
প্রসঙ্গত, আসামের এই বোরোল্যান্ড অঞ্চলটি সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে বোরো আদিবাসী সম্প্রদায় অধ্যুষিত। বৃটিশ শাসনকালে অঞ্চলটিতে ভারতবর্ষের নানা অঞ্চল থেকে মুসলামনরা অভিবাসী হন। জমির দখল নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায়ই ছোটোখাটো উত্তেজনা দেখা দেয়।
ব্রহ্মপুত্রের উত্তর তীরে ভুটান সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলটিকে আসাম থেকে আলাদা করে বোরো জনগোষ্ঠির জন্য পৃথক রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বোরো লিবারেশন টাইগার বাহিনী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল ১৯৯৬ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। ২০০৩’র ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এক চুক্তিতে চারটি নবগঠিত জেলা নিয়ে বোরোল্যান্ড আঞ্চলিক স্বশাসিত এলাকা গঠিত হলে অস্ত্র ত্যাগ করে এই বাহিনী। পরে এদের অধিকাংশই ভারতের কেন্দ্রীয় সংরক্ষিত পুলিশ বাহিনীতে আত্মীকৃত করা হয়।