ঢাকা: কৃষিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোসহ তাদের শ্রমের স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, ‘কৃষিতে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে নারী কৃষকদের দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধিতে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।’
শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির ১৬তম জাতীয় সম্মেলন ও সেমিনার--২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
স্পিকার বলেন, ‘দারিদ্র্যবিমোচন ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা টেকসই করতে হলে কৃষির এই বিপ্লব ধরে রাখতে হবে। কৃষির উন্নয়নে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কৃষি অর্থনীতিবিদদের কৃষির ওপর আরও গভীরভাবে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কৃষির অগ্রযাত্রা ও সফলতাকে অব্যাহতভাবে এগিয়ে নিতে কৃষি অর্থনীতিবিদদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।’
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রযুক্তির ব্যবহার ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার মাধ্যমে কৃষির যান্ত্রিকীকরণের সঙ্গে আমাদের কৃষকদের খাপ খাওয়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে ঝরেপড়া কৃষক ও শ্রম শক্তিকে প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে কৃষির মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। যান্ত্রিকীকরণের ফলে কাজ হারা কোনও কৃষক যেন সমাজের জন্য বোঝা না হয়, এ বিষয়টির ওপর কৃষিবিদ ও কৃষি অর্থনীতিবিদদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।’
উন্নত অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য কৃষি কাঠামোর আমূল পরিবর্তন আনতে হবে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।
এতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেম বিসিএস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সিকাদার এনডিসি।
সম্মেলন বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ড. আ মু মুয়াজ্জেম হোসেন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস প্রফেসর ড. আব্দুস সাত্তার মন্ডলকে বিশেষ সম্মানসূচক স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।
এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত অর্থনীতিতে রূপান্তর’।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের সম্মানিত সদস্য প্রফেসর ড. শামসুল আলম। সমিতির মহাসচিব ড. মুজিবুল হক চুন্নু সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সমিতির জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি মিহির কুমার রায়।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বলেন, জ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি খাত প্রতিষ্ঠায় ফসল খামারগুলোর আয়তন বাড়ানোতে উৎসাহ দিতে হবে, এর জন্য জমিক্রয়ে আইনগত ও কৃষি ঋণের সংস্কার প্রয়োজন হবে।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, বিগত অর্ধশতাব্দীর বেশী সময় ধরে যে কৌশলে ক্ষুদ্র জোত-জমার কৃষিকে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, তা হয়তো দিয়ে যেতে হবে, তবে বড় কৃষি খামার প্রতিষ্ঠার কৌশলকেও উৎসাহ দিতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ড. শামসুল আলম বলেন, বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, গ্রাম এলাকায় ৮৭ ভাগ কৃষি পরিবারের রয়েছে অকৃষি উৎস থেকে আয়ের ব্যবস্থা অর্থাৎ সুযোগ পেলেই ক্ষুদ্রকৃষক-বর্গাচাষীরাও অকৃষিজ কর্মে ঢুকছে।
প্রবন্ধ উপস্থাপক আরো বলেন, বাণিজ্যিক কৃষির বিকাশে বাজার অর্থনীতির কারণে একটি ধনাত্বক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, এক বেগবান করতে হবে। উন্নত প্রযুক্তি/ লাগসই প্রযুক্তি উৎপাদনে সরকারি গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। নিত্য নতুন গবেষণা ব্যতিত কোন উন্নয়ন বা প্রবৃদ্ধি টেকসই হয় না। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নত অর্থনীতিতে রুপান্তরিত হবে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে তিনটি কারিগরি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। অধিবেশনগুলোতে চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. রেজাউল করিম তালুকদার, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ এর উপাচার্য বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম খান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ডব্লু এম এইচ জাইম। এছাড়াও সমিতির ভবিষ্যত নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য একটি বিজনেস সেশন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।