কক্সবাজার : তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা জাতিগত নিধনের শিকার। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে, সে লক্ষ্যে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।
আজ বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন বাংলাদেশ সফররত তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম।
বেলা ১১টার দিকে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর সড়কপথে সরাসরি চলে যান ৩৮ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার বালুখালী-২ রোহিঙ্গা শিবিরে। গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পালিয়ে আসা সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে অন্তত তিন লাখ আশ্রয় নিয়েছে বালুখালীর এই শিবিরে। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর আসার খবর শুনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু শিবিরের বাইরে খোলা মাঠে জড়ো হয়।
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শিবিরে নেমে প্রথমে তুরস্কভিত্তিক সাহায্য সংস্থা ‘আফাদ’ পরিচালিত একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের কাছে তুরস্ক সরকারের দেওয়া দুটি অ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর করেন। এই অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে রোহিঙ্গাদের সেবা দেওয়া হবে।
বালুখালী ত্রাণশিবির পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো এবং মিয়ানমারে নিরাপদে বসবাসের জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে একযোগে কাজ করতে হবে। মিয়ানমারের অসহায় এই মানুষগুলোকে (রোহিঙ্গা) মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে কাজ করছে।
পরে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে হেঁটে একটু দূরে আরেকটি রোহিঙ্গা ত্রাণশিবিরে যান। সেখানে আশ্রিত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে তিনি মাটিতে বসে রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শোনেন। এ সময় কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে চিৎকার করে কান্নাকাটি করেন।
এরপর পাশের ময়নারঘোনা ত্রাণশিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে খাবার ও শিশুদের উপহারসামগ্রী বিতরণ করেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তুরস্কের উপপ্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রসচিব, কক্সবাজার-৩ আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, জাতিসংঘের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) আবুল কালাম, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, পুলিশ সুপার এ কে এম ইকবাল হোসেন প্রমুখ।