আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্যারিসে হামলার পর সকালে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ।
প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে শতাধিক মানুষের প্রাণহানির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসকে দায়ী করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। শুক্রবারের হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে আইএসের ‘মিডিয়া গ্রুপ’ আল হায়াত মিডিয়া সেন্টারের একটি বার্তা এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে পাঠানো ওই বার্তায় বলা হয়েছে, “আমাদের আট ভাই বিস্ফোরকভর্তি ভেস্ট পরে, অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্যবস্তু ঠিক করে ফ্রান্সের রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।”
শিল্প-সাহিত্যের শহর প্যারিসকে ‘বিকৃতির রাজধানী’ আখ্যায়িত করে হামলার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে ওই বার্তায়।
“আল্লাহর রাস্তায় এই হামলা চালিয়েছেন আমাদের একদল বিশ্বাসী ভাই, যারা ইসলামী খেলাফতের সৈনিক।”
ইসলামিক স্টেটের (আইএস) একটি ভিডিও পোস্ট হয়েছে ইন্টারনেটে। এতে হুমকি দেওয়া হয়েছে- সিরিয়ায় বোমা হামলা বন্ধ না হলে ফ্রান্সের উপর হামলা হবে। তবে এই ভিডিওটি কবেকার, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রক্তাক্ত হামলার পরদিন শনিবার নিরাপত্তা নিয়ে এক জরুরি বৈঠকের পর ওলাঁদ বলেন, ফ্রান্সের বাইরে থেকে করা পরিকল্পনায় ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের সহায়তায় এই হামলা চালিয়েছে দায়েশ (আইএস)।
ফরাসি ভাষায় দেওয়া বক্তব্যে আইএসের নাম আরবিতে ‘দায়েশ’ উচ্চারণ করেন তিনি। আইএস দমনে সিরিয়ায় যে বিমান হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, তার অন্যতম সহযোগী ফ্রান্স।
ওলাঁদ বলেন, প্যারিসে হামলাকারীরা ‘যুদ্ধ’ চালিয়েছে। আর সে যুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে ফ্রান্সের সম্ভাব্য সব কিছু করতে হবে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় এক যোগে প্যারিসের কেন্দ্রের কয়েকটি স্থানে হামলা চালায়। এর মধ্যে সিটি হলে একটি কনসার্টে গুলিবর্ষণে নিহত হন অন্তত ৮৭ জন। স্টেডিয়াম ও রেস্তোরাঁসহ পাঁচটি স্থানে বোমা ও গুলিতে মারা যান আরও ৪০ জনের মতো।
এর মধ্যে স্টেডিয়াম স্তাদে দে ফ্রান্সের বাইরে বোমাহামলা হয়। ওই সময় স্টেডিয়ামে জার্মানি ও ফ্রান্সের ফুটবল খেলা দেখছিলেন খোদ ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
তিনটি স্থানে হামলাকারী আটজনের সবাই মারা গেছে বলে জানান ফরাসি প্রেসিডেন্ট। হামলায় ১২৭ জন নিহত এবং ১৮০ জন আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।
হামলার পরপরই দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ওলাঁদ। নিহতদের স্মরণে তিন দিনের জাতীয় শোকও শনিবার ঘোষণা করেছেন তিনি। এই সঙ্কটময় অবস্থায় তিনি সোমবার পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন।
“জনগণের জীবন এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষায় সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে,” বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
এই হামলাকে কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে ওলাঁদ এই সময়ে ফ্রান্সের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সাহসের সঙ্গে সঙ্কট মোকাবেলার আহ্বানও জানান তিনি। জনগণকে উদ্দীপ্ত করে ওলাঁদ বলেন, “যদি ফ্রান্স আহত হয়, তবে ফ্রান্স জেগে ওঠে।”
হামলার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “আমরা জানি, এরা কোথা থেকে এসেছে; আমরা জানি, কারা এই অপরাধী, আমরা জানি, কারা এই সন্ত্রাসী।
“তারা আমাদের ভয় দেখাতে চায়.. কিন্তু আমরা সেই জাতি, যারা নিজেদের রক্ষা করতে জানে; যারা জানে, কীভাবে নিজেদেরে শক্তি কাজে লাগাতে হয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আবারও আমাদের জয় হবে।”