আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ে তেহরান ও ‘পি৫+১’ ভুক্ত দেশের প্রতিনিধিগণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছেছেন।
সমঝোতা অনুযায়ী আগামী ৬ মাসের জন্য ইরান ৫ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ না করার অঙ্গীকার করেছে। তবে এর বিনিময়ে ইরান প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো অর্থের অবরোধ তুলে নেয়ার শর্ত দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ কিছুটা শিথিলে সম্মত হয়েছে।তবে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সতর্ক করে বলেছেন, ইরান অঙ্গীকার পালনে ব্যর্থ হলে এ সুযোগ প্রত্যাহার করে আরো কঠোর অবরোধ আরোপ করা হবে।
জেনেভায় চারদিন ধরে চলা আলোচনার শেষ দিনে শনিবার ইরান ও ‘পি৫+১’ ভুক্ত দেশের প্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ এক চুক্তিতে উপনীত হন। আগামী ৬ মাসের জন্য করা এ চুক্তি অনুযায়ী ইরান তার ইউরেনিয়ামের মজুদ ২০ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতেও সম্মত হয়েছে।এছাড়া ইরান পরমাণু কর্মকান্ড পরিদর্শনে জাতিসংঘ পরিদর্শকদের প্রবেশে আরো সুযোগ দিতেও রাজি হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটি ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখবে।ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ চুক্তিকে ইরানের পরমাণু অধিকারের স্বীকৃতি বলে মন্তব্য করেছেন। তবে তিনি ইরান কখনই পরমানু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করবে না বলেও তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানে চলতি বছরের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলই এ ধরণের একটি চুক্তিতে পৌঁছার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। এ নির্বাচনে রুহানি কট্টরপন্থী আহমেদিনেজাদকে পরাজিত করেন। প্রেসিডেন্ট রুহানি উদারপন্থী হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, এ চুক্তি ইসরাইলসহ ওই অঞ্চলকে নিরাপদ করবে। তবে ইসরাইল এ চুক্তির সমালোচনা করেছে।
চুক্তির পর এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজ বলেছে, সমৃদ্ধকরণের কাজে যে ধরণের কারিগরী সম্পৃক্ততা থাকে তাও বাতিল করবে ইরান। এছাড়া তেহরান তার ইউরেনিয়াম মজুদ ২০ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতেও সম্মত হয়েছে।
তবে হোয়াইট হাউজ জোর দিয়ে বলেছে, ৬ মাসের জন্য করা এ চুক্তি ক্ষণস্থায়ী। আরোপিত অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য ইরানকে অবশ্যই আরো কিছু করতে হবে এবং বিশ্বকে বোঝাতে হবে যে তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না।
হোয়াইট হাউজ আরো বলছে, ইরান ফোর্ডো কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য নতুন কোন সেন্ট্রিফিউজ স্থাপন করবে না এবং নাতাঞ্জ কেন্দ্রে থাকা সেন্ট্রিফিউজও সরিয়ে নেবে।
জেনেভায় বুধবার থেকে শুরু হওয়া ইরান বিষয়ক আলোচনায় যোগ দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফসহ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, ফ্রান্স এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ ফেবিয়াস ও গাইডো ওয়েস্টারওয়েল, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াঙ ই ।উল্লেখ্য ‘পি৫+১’ ভুক্ত দেশগুলো হল যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন, চীন ও জার্মানি।
প্রেসিডেন্ট রুহানি ক্ষমতায় আসার পর ইরান বিষয়ে জেনেভায় এটি ছিল তৃতীয় দফার বৈঠক। এছাড়া ইরানের পরমাণু কর্মসূচী বন্ধে গত ১০ বছর ধরে নানা কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত ছিল। কিন্তু সব তৎপরতাই ব্যর্থ হয়।পশ্চিমা বিশ্বের দাবি, ইরান পরামাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু‘ তেহরান বরাবর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচীর উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ।