ঢাকা: আগামী অর্থবছরের জন্য ৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার বিশাল যে উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি ঘোষণা করেছে সরকার, তাতে অর্থনৈতিক প্রজ্ঞা ও বিবেচনাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে মানতে অনাগ্রহী অর্থনীতিবিদরা। নির্বাচনী বছরের কারণে সরকার এডিপি তৈরি করতে গিয়ে উচ্চাভিলাষ ও রাজনৈতিক বিবেচনাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বলে তারা মনে করছেন।
মহাজোট সরকারের শেষ অর্থবছরে এসে নতুন যে এডিপি ঘোষণা করেছে সরকার, যে কোনো বিবেচনায় তা বিশাল এবং চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির চেয়ে ৪১.৩৬% বেশি। টাকার অংকে বৃদ্ধির পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। বৃদ্ধির এ হার অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে আগের বছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় বৃদ্ধির হার ছিলো ১৩.৭৭%, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩১.৯১%, ২০১০-১১ বছরে ৩৫.০৮%, ২০১১-১২ বছরে ২৮.২০% এবং সর্বশেষ চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৩.৮৮%।
আগামী অর্থবছরের এডিপির আয়তন ব্যাপকভাবে বাড়ানোকে রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আগামী বছরের এডিপিতে বরাদ্দহীন প্রকল্পের আধিক্য উন্নয়ন ব্যয়ে বড় ধরনের বিশৃংখলা সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন অনেকে।এছাড়া পদ্মা সেতুর জন্য এডিপিতে ৬৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়টিকে লোক দেখানো বলে মনে করছেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
নতুন যে এডিপি ঘোষণা করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে ৩টি সরকার জড়িত থাকবে। বর্তমান মহাজোট, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তী নতুন সরকার এই এডিপি বাস্তবায়ন করবে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় নতুন এডিপি অনুমোদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসির চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
প্রথমবারের মতো স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলোর নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করা হয়েছে। পদ্মাসেতু প্রকল্পে ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকাসহ সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে পরিবহন খাতে।
অনুমোদিত এডিপি’র আকার দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থ ৪১ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য ২৪ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা এবং স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৮ হাজার ১১৪ কোটি টাকা।
পরে পরিকল্পনামন্ত্রী একে খন্দকার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, পরিবহন খাতে ১৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা, পদ্মা সেতু প্রকল্প ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা, বিদ্যুৎখাতে ৯ হাজার ৫৩ কোটি টাকা নতুন এডিপিতে মোট প্রকল্পের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১১৭৬টি। এরমধ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছরে সংশোধিত অর্থবছরের এডিপি হতে স্থানান্তরিত প্রকল্পের সংখ্যা ৯৯৬।
নতুন এডিপিতে মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ১৭৬টি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের এডিপিতে, সেক্টর ভিত্তিক বরাদ দেয়া হয়েছে ৬৩ হাজার ৯৩০ কোটি, উন্নয়ন সহায়তা খাতে ১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা এবং স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন ধরা হয়েছে ৮ হাজার ১১৪ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল এডিপির আকার ধরা হয়েছিল ৫৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বেশি মনোযোগের কারণে এডিপির বরাদ্দ বেড়েছে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্ন উড়িয়ে দেন পরিকল্পনামন্ত্রী একে খন্দকার।
তিনি বলেন, এবারই প্রথম স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বরাদ্দ এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে কারণেই নতুন এডিপির আকার একটু বেশি মনে হতে পারে।এবারের এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, এর মধ্যে স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ ৮ হাজার ১১৪ কোটি টাকা।
আর এডিপি বাস্তবায়নে বিদেশ থেকে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে আসবে ২৪ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। স্থানীয় মুদ্রা খরচ ধরা হয়েছে ৪৯ হাজার ৪২১ কোটি টাকা।