ঢাকা: আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমার পরও গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস ও বিদ্যুতে দাম বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের দাম গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়া সব ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বেড়েছে।বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে এ ঘোষণা দেন কমিশনের চেয়ারম্যান এআর খান।এ মূল্যবৃদ্ধি আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। বর্ধিত মূল্য অনুসারে দুই চুলার গ্যাসের মূল্য হবে ৬৫০ টাকা এবং এক চুলায় হবে ৬০০ টাকা। যা আগে ছিল যথাক্রমে ৪৫০ ও ৪০০ টাকা। গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং বিদ্যুতের দাম ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়েছে।গ্যাসের মাসিক বিল ২০০ টাকা বাড়িয়ে এক চুলার জন্য এখন ৬০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৬৫০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।গৃহস্থালিতে মিটারভিত্তিক গ্যাসের বিল প্রতি ঘনমিটার ৫ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা করা হয়েছে।এদিকে সঙ্কুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসে (সিএনজি) প্রতি ইউনিটে (ঘনমিটার) দাম বেড়েছে ৫ টাকা। সে হিসাবে, প্রতি ইউনিট আগে ছিল ৩০ টাকা এখন হবে ৩৫ টাকা।
চা বাগানে গ্যাসের বিল ইউনিট প্রতি বেড়ে ৬ টাকা ৪৫ টাকা এবং শিল্পকারখানায় বেড়ে ৬টা ৭৪ পয়সা করা হয়েছে। তবে সার কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম আগের মতোই আছে। যেখানে সার কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছিল যথাক্রমে ২টাকা ৫৮ পয়সা ও ২টাকা ৮২ পয়সা।অবশ্য ক্যাপটিভ পাওয়ারপ্ল্যান্টে গ্যাসের দাম প্রতি ইউনিট ৮ টাকা ৩৬ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। আগে ছিল ৪টাকা ১৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ইউনিট প্রতি বাড়ানো হয়েছে ১১টাকা ৩৬ পয়সা।অপরদিকে বিদ্যুতের মূল্য লাইফ লাইন ক্রেডিটের (নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য) ক্ষেত্রে বাড়েনি (শহরে বিল ইউনিট প্রতি ৩ টাকা ৩৩ পয়সা এবং গ্রামে ৩ টাকা ৩৬ পয়সা)।
গ্রাহক পর্যায়ে ১-৭৫ ইউনিটের জন্য নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ টাকা ৮০ পয়সা; ৭৩-২০০ ইউনিটে বেড়ে ৫ টাকা ১৪ পয়সা, আগে ছিল ৫ টাকা ১ পয়সা; ২০১-৩০০ ইউনিটে ৫ টাকা ৩৬ পয়সা, আগে ছিল ৫ টাকা ১৯ পয়সা; ৩০১-৪০০ ইউনিটের মূল্য আগে ছিল ৫ টাকা ৪২ পয়সা, এখন হবে ৫ টাকা ৬৩ পয়সা; ৪০১-৬০০ ইউনিটের জন্য ৮ টাকা ৫১ পয়সা থেকে বেড়ে ৮ টাকা ৭০ পয়সা; ৬০০ ইউনিটের উপরে ৯ টাকা ৯৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৯৮ পয়সা করা হয়েছে। সেচ পাম্পের জন্য শহরে দাম ছিল ইউনিট প্রতি ২ টাকা ৫১ পয়সা, তা বেড়ে হয়েছে ৩ টাকা ৮২ পয়সা।আর পল্লীবিদ্যুতে বিরতণ কোম্পানি ভেদে ৩ টাকা ৩৯-৯৬ পয়সা থেকে বেড়ে ৩ টাকা ৮২ পয়সা করা হয়েছে।ক্ষুদ্র শিল্পে বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ৬৬ পয়সা; অনাবাসিক বাতি ও বিদ্যুতে (দাতব্য, মসজিদ, মন্দির, ক্লাব ইত্যাদি) ৪ টাকা ৯৮ পয়সা বেড়ে ৫ টাকা ২২ পয়সা; রাস্তার বাতির জন্য ৬ টাকা ৯৩ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ১৭ পয়সা করা হয়েছে।বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যুতে দাম ইউনিট পুতি ৯ টাকা ৫৮ পয়সা থেকে বেড়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সা। বৃহৎ শিল্প :১১ কিলোভোল্টের ৭ টাকা ৩২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৫৭ পয়সা; ৩২ কিলোভোল্টের ৬ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৩৫ পয়সা; ২৩০ কিলোভোল্টের ৭ টাকা ২৫ পয়সা; ৩৩ কিলোভোল্টের জন্য ৭ টাকা ২০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৪৯ পয়সা করা হয়েছে।বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির জন্য বিভিন্ন মূল্য হার ছিল। তবে এবার সবার জন্য একই হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যও বেড়েছে। সব বিতরণ কোম্পানির জন্য গড়ে বাড়ানো হয়েছে ২৩ পয়সা। একই সঙ্গে সঞ্চালন চার্জ বাড়ানো হয়েছে ৫ পয়সা।সংবাদ সম্মেলনে বর্ধিত মূল্যহার তুলে ধরে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো থেকে প্রস্তাব এসেছিল যে দাম বাড়ানো দরকার। ফেব্র“য়ারিতে আমরা শুনানি নিয়েছিলাম। অনেক কিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছি আমরা।গ্যাসের দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে এ আর খান বলেন, পৃথিবীর আর কোথাও এত কম দামে গ্যাস পাওয়া যায় না।কারওয়ান বাজারে বিইআরসি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।সর্বশেষ ২০০৯ সালের ১ অগাস্ট আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় গ্যাসের মূল্য পুননির্ধারণ করা হয়েছিল। তখন সিএনজি ও ইটভাটা ছাড়া সব ধরনের গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়।গত জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার টানা দিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নতুন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গ্যাসের দাম বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান জানিয়েছিলেন।
গ্রাহক পর্যায়ে সর্বশেষ বিদ্যুতের দাম বেড়ানো হয় গত বছর মার্চে। এ সময় বিদ্যুতের দাম গড়ে ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বাড়ানো হয়। তার আগের পাঁচ বছরে খুচরা ও পাইকারি মিলিয়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় ১১ দফা।নতুন করে দাম বাড়াতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব নিয়ে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি গণশুনানি শুরু করে বিইআরসি। এতে পিডিবি, পিজিসিবি, ওজোপাডিকোর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও কমিশন এতদিন কোনো সিদ্ধান্ত জানাচ্ছিল না।এদিকে আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয় বাজারে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম পুননির্ধারণ করা হবে বলে রোববার জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে কমতে কমতে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৪০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। ২০০৯ সালের মার্চের পর এই প্রথম জ্বালানি তেলের দাম এত নিচে নামল।বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কমলেও স্থানীয় বাজারে কমায়নি সরকার।সর্বশেষ ২০১৩ সালে সমন্বয়ের সময় বাড়ানো হয়েছিল জ্বালানি তেলের দাম। বর্তমানে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৭ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।