ঢাকা: হেফাজতে ইসলামের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বিরোধী দল শিকার করতে চেয়েছিল দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় বিরোধী দলের মন খারাপ। তারা হেফাজত ইস্যুতে তথ্যসন্ত্রাস চালাচ্ছে
শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন,গত ৫ মে শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে হত্যা করেনি। বরং হেফাজতের কর্মীদের বাসে ও লঞ্চে উঠিয়ে দিয়েছে। আর সেখানে কী হয়েছে, তা টেলিভিশনে সারা দেশের মানুষ লাইভ দেখেছে। কিন্তু বিরোধী দল তথ্যসন্ত্রাস করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সদ্য অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মহিলাদের কাছে কিছু ছবি দেখানো হয়েছে, যা দিয়ে তারা বলতে চেয়েছে যে শাপলা চত্বরে বহু মানুষকে গুলি করে মারা হয়েছে।
হেফাজতের তাণ্ডব প্রসঙ্গে তিনি বলেন,কী নির্মমভাবে কোরান শরিফ পোড়ানো হয়েছে। কারা পুড়িয়েছে, তার ছবি আছে। শিবিরের ক্যাডাররাই এই কাজ করেছে। এ সময় বিরোধী দলের সদস্যরা কেন তাদের ধরেন না বলে চিৎকার দিলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধরা হচ্ছে, আরও ধরবো। শেখ হাসিনা বিরোধী দলের অপপ্রচার সম্পর্কে বলেন, পবিত্র মক্কা শরিফ নিয়ে জালিয়াতি করতেও আমার দেশ পত্রিকা পিছপা হয়নি।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এবং আমার দেশের সম্পাদক বসে বসে অনেক কিছু তৈরি করেন বলেও প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন।
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি সম্পাদক না, ছিলেন ব্যবসায়ী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। কিন্তু এমন এক উপদেষ্টা নিয়োগ দিলেন যে, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কমলো। কিন্তু উপদেষ্টা নিজে বড়লোক হলেন, এরপর পত্রিকা বের করলেন।
ইন্টারনেট থেকে ছবি ডাউনলোড করে বিকৃত করে তা আমার দেশ প্রকাশ করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বলেও অভিযোগ করেন।
আস্তিক-নাস্তিক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমি যদি নাস্তিক হই, তাহলে আস্তিক কে? আমার পূর্ব পুরুষ কী করতেন তা বাংলাদেশের মানুষ জানে। স্বাধীনতার পরে জাতির জনক মদ জুয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন। আর জিয়া মদ জুয়ার লাইসেন্স দেয়া শুরু করেন।
ওয়াশিংটন টাইমসে লেখা নিবন্ধটি খালেদা জিয়ার দাবি করে তা নিয়ে সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার বিরোধীদলীয় নেতার পর সংসদে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে সংসদ নেতা বলেন, ওই লেখার ল্যাঙ্গুয়েজ ও উনার আজকের বক্তৃতার ল্যাঙ্গুয়েজে অনেক মিল আছে।
“অস্বীকার করলে পারবেন না। এখানে লেখা আছে- খালেদা জিয়াস আর্টিকেল, ফরমার প্রাইম মিনিস্টার, প্রেজেন্ট অপজিশন লিডার। ইন্টারনেটে খুঁজলেই যে কেউ দেখতে পাবে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যে জিএসপি সুবিধা বাতিলের পর এজন্য খালেদা জিয়াকে দায়ী করে তার নামে গত জানুয়ারি ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ ধরে সমালোচনা করে আসছে সরকারি দলের নেতারা।
এর জবাবে শনিবার সংসদে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন,বলা হয়েছে, আমি নাকি চিঠি দিয়ে এই সুবিধা বন্ধ করেছি। কিন্তু আমি কোনো চিঠি পাঠাইনি।বিরোধীদলীয় নেতার এই বক্তব্যের সময় শেখ হাসিনা হাতে থাকা ওয়াশিংটন টাইমসে খালেদা জিয়ার নামে ছাপানো ওই নিবন্ধের অনুলিপি তুলে ধরেন।
তা দেখে খালেদা জিয়া বলেন, এটা আমার চিঠি নয়। আমি প্রমাণ দেখাতে পারি- কেউ কেউ বলে- আমার নামে একটি লেখা বিদেশি পত্রিকায় প্রচারিত হয়েছে।। আমি এমন কোনো লেখা পাঠাইনি।
ওই নিবন্ধ ধরে শেখ হাসিনা বলেন, উনি আদার স্যাংশনের সুপারিশ করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে সুপারিশ করেছিলেন। এই আদার স্যাংশনের মানে জানেন?
“এই আর্টিকেলে ১২ জায়গায় আমার নাম নিয়েছেন। আমরা বিরুদ্ধে লিখবেন ভালো কথা। দেশের বিরুদ্ধে কেন?”প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক সহনশীলতা দেখাচ্ছি। আমেরিকা জিএসপি বন্ধ করেছে। উনার (বিরোধীদলীয় নেতা) বক্তৃতা যেই ড্রাফট করেছে, ভালোই ড্রাফট করেছে।
আমেরিকা ২০০৭ সাল থেকে নোটিস দিচ্ছে জিএসপি বাতিল করবে। আমরা শ্রমিকদের উন্নয়নে কাজ করছি। বিএনপির সময় গার্মেন্ট শ্রমিকরা ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা। আমরা এই বেতন ৮২ ভাগ বৃদ্ধি করেছি।এই জিএসপি বন্ধ করার জন্য আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী ওয়াশিংটন টাইমসে লিখেছেন, যার মালিক ইহুদি, বলেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন,না বললে তো চলবে না। আর্টিকেলের ১২ জায়গায় আমার নাম লিখে, আমার বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে বলেন কিন্তু দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কেন? আপনি লিখতেই পারেন। আপনার ছেলেকে দিয়ে ২০০৪ সালে আমার ওপর গ্রেনেড হামলা করিয়েছিলেন’।
শেখ হাসিনা যখন সংসদে ওই নিবন্ধ থেকে অংশবিশেষ পড়ে শোনাচ্ছিলেন তখন বিরোধীদলীয় নেতারা হইচই করতে থাকেন এবং নিবন্ধটি খালেদা জিয়ার নয় বলে দাবি করতে থাকেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘না বললে তো চলবে না।
সংসদ নেতা আরো বলেন, ‘যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল ইইউতে চিংড়ি রপ্তানি বন্ধ হয়েছিল জালিয়াতির জন্য। আমরা জিএসপি রক্ষা করি। ইউরোপে চুক্তি করি। নিজে যাই। অস্ত্র ছাড়া ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিউটি ফি কোটা পাই। আমেরিকা ২০০৭ সাল থেকে নোটিশ দিচ্ছে। আমরা তো ঠেকিয়ে রেখেছি। আমরা শ্রমিকদের উন্নয়নে সার্বিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি ব্যাংকের এমডি কাকে রাখা হবে সে নিয়ে বিতর্কের জেরে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছে। তবে, এ নিয়ে তিনি বা তাঁর সরকার শঙ্কিত নয়। তিনি বলেন এর জন্য হয়তো তাঁকে বঙ্গবন্ধুর মত রক্ত দিতে হবে, তবে তিনি মাথা হেঁট করবেন না। তিনি আরো বলেন, বিএনপি আমলে যোগাযোগ, সেতু, বিদ্যুত্ খাতে ষড়যন্ত্রের কারণে বিশ্বব্যাংক সহযোগিতা বন্ধ করেছিল। ব্যঙ্গ করে তিনি বলেন, ‘অর্থ আর প্রেম লুকিয়ে রাখা যায় না। ভাঙ্গা সুটকেস থেকে কি বেরিয়েছে, সেটা আর বলতে চাই না। বিরোধী দলীয় নেতার ছেলেরা অর্থ পাচার করেছেন, সেটা আমরা ফিরিয়ে এনেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিবরিয়া,আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যার সঙ্গে বিএনপির সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিল। বিএনপি আমলে সারাদেশে যেভাবে সন্ত্রাস ছিল তাতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছিল।শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি নিয়ে কথা বলা হয়। আপনার (খালেদা) ফালু-বাদলকে ধরলেই শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির হোতাদের পাওয়া যাবে।
হলমার্ক কেলেঙ্কারি সম্পর্কে তিনি বলেন,হলমার্কের তানভীর হাওয়া ভবনের লোক। জিয়া পরিষদের লোক।এছাড়া তিনি জিয়া পরিবার ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক ঋণের হিসাব তুলে ধরে কঠোর সমালোচনা করেন।