ঢাকা, ১৫ জানুয়ারী : গত বছর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, পরিচালনা পর্ষদে রদবদল ও অর্থের তারল্য সঙ্কটসহ নানা অস্থিরতায় ব্যাংকিং খাত ভুগলেও প্রতিটি সূচকে নিজেদের অগ্রগতি হয়েছে বলছেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (আইবিবিএল) চেয়ারম্যান আরাস্তু খান।
সোমবার রাজধানীর দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকটির ২০১৭ সালের অগ্রগতি তুলে ধরতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে এক বছর পার করা আরাস্তু খান সাংবাদিকদের বলেন, “গত বছরে আমাদের আমানত অন্যান্য আট-দশটি ব্যাংকের সমান। সেই সাথে আমাদের আগের বছরের তুলনায় বিনিয়োগ বেড়েছে ১৩ দশমিক সাত শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় আমাদের আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ।
“এছাড়া ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলোতে পরিচালনা পর্ষদের রদবদল নিয়ে অস্থিতিশীলতা থাকলেও আমাদের কমিটি সফলভাবে এক বছর পার করেছি। অন্যান্য ব্যাংক নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, সেখানে উল্টো দিকে আমাদের অগ্রগতি হয়েছে।“
ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ আগের থেকে কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “২০১৭ সালে আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ মোট বিতরণ করা ঋণের ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা ২০১৬ ও ২০১৫ সালে ছিল যথাক্রমে ছিল ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ ও ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
“গত বছরে আমাদের বিনিয়োগ আগের বছরের চেয়ে আট হাজার ১০০ কোটি বেড়েছে।”
ঋণ খেলাপির এই পরিমাণ বিগত পাঁচ বছরের মধ্য সর্বনিম্ন বলে জানান গত বছরের ৫ জানুয়ারি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়া সাবেক এই সচিব।
তিনি বলেন, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ৯ শতাংশের (মোট বিতরণ করা ঋণের) নিচে ছিল। ২০১৬ সালে তা ১০ শতাংশ অতিক্রম করে। সারা বছর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে খরা থাকলেও আইবিবিএলকে তার প্রভাব ‘তুলনামূলক কম’ সইতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১১৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে, যা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ বেশি।
আরাস্তু খান বলেন, “২০১৭ সালের শেষে এসে ব্যাংকের রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে ২৭ শতাংশ, সেই সাথে বছরের শেষ ১৪ দিন গড়ে ১০ মিলিয়ন ডলার করে রেমিটেন্স এসে মোট ১৪০ মিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে। আশা করি এই বছরে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স লক্ষমাত্রা অর্জন করতে পারব।”
ইসলামী ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে নতুন করে যে পরিমাণ আমানত আসছে, কয়েকটি ব্যাংক তার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করছে। এতে ব্যাংকগুলো ঋণ-আমানত অনুপাতের সীমা ছাড়িয়ে আগ্রাসী ব্যাংকিং চালাচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে।
এমন অভিযোগে ইসলামী ব্যাংক প্রসঙ্গে আরাস্তু খান বলেন, “আইবিবিল মোট আমানতের ৮৭ দশমিক ৭ শতাংশ (৬৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করেছে, যেখানে আমাদের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত আমরা বিনিয়োগ করতে পারব। আমাদের ব্যাংকে অলস অর্থের পরিমাণ সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা।”
তিনি জানান, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ৭৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ৭ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা বেশি।
এছাড়া ৮ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগসহ ব্যাংকের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৭০ হাজার ৯৯ কোটি টাকা এবং গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ।
২০১৭ সালে ব্যাংক আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য করেছে যথাক্রমে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও ২৪ হাজার কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) আবদুল মতিন, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান, পরিচালক সাইফুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আবদুল হামিদ মিয়াসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।