ঢাকা: দেশের সর্বহৎ বেসরকারি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংককে নিয়ে চলছে টানাটানি। বারবার পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের ফলে ব্যাংক অনেকটাই সঙ্কটে পড়েছে। এরই মধ্যে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিতে নিতে বছর খানেক আগে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মুস্তফা আনোয়ারকে সরিয়ে দিয়ে আরাস্ত খানকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। কিন্তু মেয়াদ পার করতে পারলেন না আরাস্ত খানও। মঙ্গলবার তাকেও সরিয়ে দিয়ে নতুন চেয়ারম্যান করা হয়েছে ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক ড. নাজমুল হাসানকে।
হঠাৎ করে আবারো বড় ধরনের পরিবর্তনে ইসলামী ব্যাংক নিয়ে সর্বমহলে চলছে নানা কানাঘোষা। আরাস্তু খান মঙ্গলবার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় পদত্যাগপত্র জমা দেন।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগের কথা জানান। পদত্যাগের পর ইসলামী ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে চেয়ারম্যান আরাস্তু খানের ছবি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়েছে ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল হাসানকে।
আরাস্তু খান বলেছেন, ‘কাজের চাপ সামলাতে না পেরে পদত্যাগ করেছি। ব্যাংকের কারণে পরিবারকে সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।’
আসলে কী তাই? না এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে তা নিয়েই চলছে নানা কানাঘোষা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে বিশেষ কয়েকজন ব্যক্তি সরকারকে বুঝিয়ে আসছিল যে- ইসলামী ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা জামায়াত-শিবিরের ফান্ডে যাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে জামায়াত-শিবিরকে দুর্বল করতে হলে ব্যাংকটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এরপর ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মুস্তফা আনোয়ার ও এমডি আব্দুল মান্নানকে সরিয়ে দিয়ে আরাস্ত খানকে চেয়ারম্যান ও আব্দুল হামিদ মিয়াকে এমডি করা হয়। আর শামীম আফজালকে দেয়া হয় ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ।
এদিকে, নতুন পর্ষদ এসে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তদন্ত করা হয় যে ইসলামী ব্যাংকের টাকা আসলেই জামায়াতের ফান্ডে যায় কি না। কিন্তু একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সরকারকে জানানো হয় যে, ব্যাংকের কোনো টাকা জামায়াত-শিবিরের ফান্ডে যায় না। আর ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা আছেন তারা জামায়াত-শিবিরকে সমর্থন করলেও তারা সৎ মানুষ। এবং ব্যাংকের কাজে তারা খুব কর্মঠ ও যোগ্য।
গোয়েন্দা রিপোর্ট পাওয়ার পরই চেয়ারম্যান আরাস্তু খান একাধিকবার বলেছেন যে, ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মতো এত সৎ মানুষ আমি জীবনেও দেখিনি। তারা নামাজী, কর্মঠ ও যোগ্য। ইসলামী ব্যাংকে যে সততা রয়েছে তা সরকারের কোনো খাতেই নেই। এরপর থেকে সরকারও এনিয়ে আর মাথা ঘামায়নি।
কিন্তু, এসব প্রতিবেদন মেনে নিতে পারেনি ওইসব ব্যক্তিরা। তারা ফের বললেন ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ে জামায়াতের লোক আছে। আরো পরিবর্তন আনা জরুরি।
অপরদিকে, ইসলামী ব্যাংকের বড় শেয়ার হোল্ডার হলো এস আলম গ্রুপ। এস আলম কর্তৃপক্ষ বললো- আর পরিবর্তনের দরকার নেই। ব্যাংকটা ভাল চলা দরকার। এখন যারা আছেন তারা ব্যাংকটিকে ভাল চালাচ্ছেন। কিন্তু, ওইসব ব্যক্তিরা বললেন আবার তদন্ত করতে হবে। জামায়াতের সঙ্গে অনেকের সংশ্লিষ্টতা আছে। তাদেরকে বের করে দিতে হবে। কিছু দিন আগে হঠাৎ করেই ৫ জন এমডিকে বাদ দেয়ার পেছনেও তাদের হাত রয়েছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এসব নিয়ে এখন এস আলম গ্রুপ ও ওইসব বিশেষ ব্যক্তিরা মুখোমুখি অবস্থানে। এতে ইসলামী ব্যাংক আরও বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে মনে করছে এস আলম গ্রুপ।
এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যাংকটিতে আরও বড় ধরনের বিপত্তি ঘটতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।