আওয়ামী লীগ তার এ শরিকের সঙ্গে কোনও আলাপ-আলোচনা বা মতামত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না বলেও জাতীয় পার্টি নেতারা অভিযোগ করেন। দীর্ঘ দিন হলো মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক কোনও বৈঠকও হচ্ছে না। গত বছর ২ জুন গণভবনে মহাজোটের সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রেক্ষাপটে দলের শক্তি ও গুরুত্ব বোঝাতে হবিগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। জাতীয় পার্টিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন ও মহাজোটকে সক্রিয় করে না এগুলে এ ধারাবাহিকতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির নেতারা। তারা জানান, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। উল্লেখ্য, পৌরসভা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মহাজোটগতভাবে করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু এ ঘোষণা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। শেষ মহূর্তে জাতীয় পার্টিকে ১৯টি পৌরসভা ছেড়ে দেওয়া হলেও এসব জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বসানো যায়নি। এতে জাতীয় পার্টি ক্ষুব্ধ হয়।
পৌর নির্বাচনে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রার্থী প্রত্যাহার করা হলেও হবিগঞ্জে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রতিদ্বিন্দ্বিতা করে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাত্র এক হাজারের কিছু বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ভোট পান ২২ হাজারেরও বেশি। জাতীয় পার্টির নেতাদের মতে, এখানে তাদের প্রার্থী না থাকলে মহাজোটগতভাবে প্রার্থী দিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতে পারতেন।
এ আর এ নির্বাচনই প্রমাণ করে আগামীতে যে কোনও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য জাতীয় পার্টি গুরুত্বপূর্ণ বলেও এ দলের নেতারা মন্তব্য করেন। এ ক্ষেত্রে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে জাতীয় পার্টি বিশেষ বিবেচনায় নেবে বলে দলের নেতারা জানান। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ চৌধুরী, হারুন অর রশিদ, ব্রিগেডিয়ার (অব.) মাহমুদ হাসানের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি এককভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি শুরু করবে বলে দলের নেতারা আরও জানান।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, মহাজোটকে অগ্রসর করা উচিত বলে আমরা মনে করি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা করবে কি-না জানি না। এটা তাদের বিবেচনার ব্যাপার। তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে আমরা বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছি। ১৯টি পৌরসভা ছেড়ে দিয়েও আবার দেয়নি। কথা দিয়ে কথা রাখেনি। আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো আমরা এককভাবেই প্রার্থী দেব। ঢাকা সিটি নির্বাচনেও প্রার্থী থাকবে।
জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সংকট মোকাবেলায় মহাজোটকে নিয়েই অগ্রসর হওয়া উচিত। পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেই তো নিজেকে ছাড় দেয়নি। এতে তাদেরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। এদিকে, মহাজোটকে সক্রিয় করতে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে বসার চিন্তা-ভাবনা করছে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি আমাদের দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা। এরপর আমরা মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সঙ্গে বসার চিন্তা-ভাবনা করব।