পুলিশের চারজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে র্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকারকে পুলিশের আইজি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই ৪ অতিরিক্ত আইজিপি হলেন_ ফনীভুষণ চৌধুরী, নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার ও নাঈম আহমেদ। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে পুলিশের আইজি পদে পরিবর্তন নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছিল। বিদায়ী আইজি নূর মোহাম্মদও একাধিকবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, তিনি আর এ পদে থাকতে আগ্রহী নন। বিষয়টি তিনি অনেক আগেই সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে জানিয়েছেন। এ অবস্থায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে কয়েকজন ডিসি পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। এ নিয়ে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবাদ সম্মেলনে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। আইজি পুলিশ প্রধান হিসেবে সেখানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। এ নিয়ে তখন প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা পুলিশের আচরণের কঠোর সমালোচনা করেন। এরপরই আইজি পরিবর্তনের বিষয়টি সামনে চলে আসে। পরিবর্তনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আইজিসহ পুলিশের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তাও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। গতকাল সকাল ১১টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়। খবরটি জানার পর পুলিশ সদর দফতরের অধিকাংশ কর্মকর্তাই আইজির রুমে যান। এ সময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। অনেক ঘটনার সাক্ষী আইজিপি নূর মোহাম্মদ : ওয়ান-ইলেভেনের পর ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পান নূর মোহাম্মদ। প্রায় ৩ বছর ৭ মাস তিনি দায়িত্ব পালন করেন। আশির দশকের পর তিনিই দীর্ঘ সময় পুলিশের আইজিপির দায়িত্ব পালন করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু'বছর ও বর্তমান মহাজোট সরকারের শাসনামলের পৌনে দুই বছর দায়িত্ব পালনকালে তিনি সব ধরনের বিতর্কের ঊধর্ে্ব থেকে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছেন। তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিরোধী দল থেকেও কোনো ধরনের প্রশ্ন ওঠেনি। গতকাল পুলিশ সদর দফতরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপকালে বিদায়ী আইজিপি বলেন, পুলিশকে একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আগামীতে যারাই এ দায়িত্ব পালন করবেন, আশা করি তারা পুলিশের অগ্রযাত্রাকে সামনের দিকে নিয়ে যাবেন। দায়িত্ব পালনকালে আপনার ব্যর্থতা কী ছিল_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'পুলিশের সংস্কারসহ নানা সুযোগ-সুবিধা সংশ্লিষ্ট কিছু কাজে হাত দিয়েও সম্পন্ন করতে পারিনি।' সফলতার প্রসঙ্গে বলেন, 'আমার সফলতার বিষয়টি বাহিনীর সদস্যরাই মূল্যায়ন করবে।'
আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নতুন আইজিপির সাক্ষাৎ :
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার। এরপর তিনি র্যাব সদর দফতরে গিয়ে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নেবেন। অতঃপর পুলিশ সদর দফতরে গিয়ে নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। শেষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে শহীদ পুলিশ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
জীবন বৃত্তান্ত : হাসান মাহমুদ
১৯৮৪ সালে বিসিএস (পুলিশ) ১৯৮২ ব্যাচের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালে এএসপি (সার্কেল) হিসেবে টাঙ্গাইলে তার পুলিশ জীবনের সূচনা করেন। পরে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (অতিরিক্ত), ডিসি (দুইবার), অতিরিক্ত এসপি সিলেট, এসপি (টাঙ্গাইল), অতিরিক্ত কমিশনার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, প্রিন্সিপাল পুলিশ একাডেমী, ডিআইজি (প্রশাসন) পুলিশ সদর দফতর, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (ট্রেনিং) পুলিশ সদর দফতর, অতিরিক্ত আইজি স্পেশাল ব্রাঞ্চসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সাল থেকে র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। হাসান মাহমুদ খন্দকার রংপুরের পীরগাছায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম খন্দকার আবুল হাসেম, তিনিও একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি দুই সন্তানের জনক।
জীবন বৃত্তান্ত : মোখলেছুর রহমান
র্যাবের নতুন মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান ১৯৮৪ সালে বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশে নিয়োগ পান। তবে যোগ দেন ১৯৮৬ সালে। সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে এবং এসএসএফে কর্মরত ছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাঙামাটি ও নোয়াখালী জেলায়। সিলেট ও নরসিংদীর পুলিশ সুপার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। কুমিল্লার সদর দক্ষিণে বাড়ি এই পুলিশ কর্মকর্তা এর আগে র্যাব ও এনএসআইর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে তিনি রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে যোগ দেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। রেটিং দিন :