মঙ্গলবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকে সরকার পতনের আন্দোলনে শরিক হওয়ার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ নিয়ে বঙ্গবীরের বাসায় গেলে তিনি এ কথা জানিয়ে দেন।বস্তুত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত হওয়ায় কাদের সিদ্দিকী মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদার রক্ষা করে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে শরিক হওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও ঢাকা সিটি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং অপর ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে নিয়ে মির্জা ফখরুল রাত ন’টার দিকে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে ২০/ ৩০ নম্বরে কাদের সিদ্দিকীর বাসায় যান।
প্রথমেই তাদের গলায় নিজের দলের নির্বাচনী প্রতীক গামছা জড়িয়ে দেন কাদের সিদ্দিকী। এরপর নিয়ে যান বাসার ভেতরে।
এদিকে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর এই সাক্ষাৎ উপলক্ষে সন্ধ্যা থেকেই সেখানে মির্ডিয়া কর্মীরা জমায়েত হতে শুরু করেন। গলায় গামছা পেঁচিয়ে সমবেত হন কাদের সিদ্দিকীর অনুসারীরা।এক ঘণ্টারও বেশি সময় একান্ত আলাপের পর কাদের মির্জা ফখরুল - সিদ্দিকী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশ এখন গণতন্ত্রের যে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে এরকম পরিস্থিতি মাঝেমধ্যেই আসে। অতীতেও অনেকবার এসেছে। সেক্ষেত্রে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমার সাথে আলোচনা করার জন্য তার পক্ষ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে পাঠিয়েছেন। আমি তাদের এই আমন্ত্রণ আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছি। আমি মনে করি দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমিসহ সরকারের বাইরে যারা আছে তাদের সঙ্গে যে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা উত্তম।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে ব্যক্তিগত পর্যায়ে মির্জা ফখরুল আমার বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু আমার দলটি ছোট বা দুর্বল যাই হোক গোপনে কিছু করাটাকে ভালো মনে করি না। সেজন্য আলোচনার প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠাবার অনুরোধ করেছিলাম। এরই ভিত্তিতে তারা এসেছেন। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এরপর খালেদা জিয়া যেদিন যেখানে ডাকেন তার সঙ্গে আলোচনায় বসবো।’এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন জোটবদ্ধ হবে না যুগপৎ হবে সে সিদ্ধান্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনাতেই হবে।’
‘চার দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত হওয়ায় আদর্শিক কারণে তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ বা যুগপৎ আন্দোলন করবেন কিনা’ জানতে চাইলে বঙ্গবীর বলেন, ‘ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা রক্ষা করেই যা কিছু করার করবো। মুক্তিযুদ্ধের অমর্যাদা করে কিছু করবো না। সেটা সময় হলেই আপনারা দেখতে পারবেন।’
এর আগে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে আর সব দলের মতো কৃষক শ্রমিক জনতা লীগকেও আমন্ত্রণ জানাতে খালেদা জিয়া আমাদের পাঠিয়েছেন। এ আমন্ত্রণ কাদের সিদ্দিকী সানন্দে গ্রহণ করেছেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে কোন দিন যে কোন সময় কাদের সিদ্দিকী আলোচনায় বসবেন।’তিনি বলেন, ‘তার মতো একজন বড় মাপের রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধাকে আমাদের চলমান আন্দোলনে শরিক করতেই ম্যাডাম এই উদ্যোগ নিয়েছেন। আলোচনা শেষেই আন্দোলন যুগপৎ না জোটবদ্ধ হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
‘কবে নাগাদ আলোচনায় বসছেন’- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খুব শিঘ্রই বসা হবে এবং আপনারা জানতে পারবেন।’
বৈঠকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পক্ষে বঙ্গবীর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খান বীর প্রতীক, সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী।