ঢাকা: বিরোধীদলীয়নেতার ছোট ছেলের পাচার করা অর্থ ফেরত আনাকে সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের মানুষের নয় বরং নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় অনুযায়ী তা কার্যকর করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জামায়াত জোট মানুষকে কিছু দেয়নি। নিয়ে গেছে। শুধু নেয়নি পাচারও করেছে।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের জনসভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেল পাঁচটা ৪০ মিনিটে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছেন। এর আগে চারটা ৫২ মিনিটে জনসভা মঞ্চে এসে আসন নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন,বিএনপির নেত্রী জবাব দিক ১৫ আগস্টের খুনিদের সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক? সম্পর্ক নিশ্চয় আছে। কারণ ১৫ ফেব্র“য়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি খুনিদের সংসদে বসিয়েছিলেন।
এর আগে চলমান ও আসন্ন সকল ষড়যন্ত্র সাংগঠনিকভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। গণতান্ত্রিক উপায়ে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার বিষয়ে সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছেন নেতারা। একই সঙ্গে বিগত জোট সরকারের নানা অপকর্মের বিপরীতে, বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে তৃণমূল নেতাদেরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
শোক দিবসের আলোচনায় সভানেত্রী শেখ হাসিনার আগে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। বক্তব্যের পুরোটা সময়জুড়ে বিগত চার দলীয় জোট সরকার আমলের নানা অপশাসনের সমালোচনা করেন তারা।
এসব থেকে শিক্ষা নিয়ে আর বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাচাই করে, আসছে নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেই ভোট দেয়ার আহ্বান জানান নেতারা।একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে নেতারা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, অন্তর্বতিকালীন সরকারের অধিনেই নির্বাচন হবে।
জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় থেকে ভোট চুরির কৌশল আমরা করিনি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সিঙ্গাপুরে বিএনপি নেত্রী পাচার হওয়া টাকা রক্ষা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। এই প্রথমবারের মতো পাচারের টাকা ও দুর্নীতির টাকা দেশে ফেরত এসেছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ১৫ আগস্ট জন্মদিন হলেও কেউ তা পালন করে না। কারণ ওইদিন জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল। এ সময় তিনি ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিজ্ঞা ছিল ক্ষমতায় এসে জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার করবে। তিনি বলেন, আমরা সেই খুনিদের বিচার করেছি। বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। দেশের মানুষ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আরেকটা কলঙ্ক আছে। সেটা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এটাও ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বিচারের কাজ শুরু হয়েছে। রায় দেশের মানুষ পেতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করেছে বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরষ্কৃত করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আর আমরা সেই খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বিচারের রায় হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সকল যুদ্ধাপরাধীরই বিচার হবে এবং সেসব বিচারের রায়ও কার্যকর করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান জোর করে ক্ষমতা দখল করে সেই বিচার বন্ধ করে দেন। সেই খুনিদেরকে প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা বানান, রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহর রহমতে সেই বিচারের রায় শুরু হয়েছে।যারা এই দেশে গণহত্যা করেছিল, সেই খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে বলেও দৃঢ় অঙ্গীকার করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়, দেশের মানুষ কিছু পায়। এবারও ক্ষমতায় এসে আমরা জনকল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের পাচার করা অর্থ আমরা ফিরিয়ে এনেছি। ভোট দিয়ে জনগণ আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করায় এটা সম্ভব হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, অন্যদিকে বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই নির্যাতন করেছে। বিরোধী দলীয় নেত্রী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে উঠে-পড়ে লেগেছেন। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে। আর এ সংবিধানকেই জিয়াউর রহমান মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্স দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করেছিলেন। আর খালেদা জিয়া জাতির পিতার হত্যার দিনে জন্মদিন পালনের মাধ্যমে উল্লাস করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়াত-শিবির- হেফাজত বায়তুল মোকারম মসজিদে পর্যন্ত আগুন দিয়েছিল। পবিত্র কোরআন শরিফ পুড়িয়েছিল। শুক্রবার নামাজ পড়তেও দেয়নি তারা। কোনো মুসলমান কি বায়তুল মোকাররম মসজিদে, কোরআন শরিফে আগুন দিতে পারে? বলেও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
আমরা উন্নয়ন করি, আর বিএনপি করে সন্ত্রাস, হত্যা, দুর্নীতি বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এ জনসভা শুরু হয়েছে দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে। শুরুতেই সকল ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। এরপর বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতারা।
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, তোফায়েল আহমেদ এমপি, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, সতীশ চন্দ্র রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা-১২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নুর তাপস প্রমুখ।