শনিবার সকালে রাজধানীনর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু একাডেমী আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘নির্বাচনে আসতে হবেই। সেই নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। দুয়েকজন ব্যক্তির যদি অন্য কোনো ভয়ভীতি থাকে, তাহলে আইন আইনের মতোই চলবে।’’
তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে সংসদে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘‘পার্লামেন্টে আসতে আপনার তো কোনো উকিল মোক্তার লাগবে না। পার্লামেন্টে আসুন। যতক্ষণ খুশি কথা বলুন। নির্বাচনের ফর্মূলা নিয়ে কথা বলুন। আমরা আপনার প্রস্তাব মনোযোগ দিয়ে শুনবো।’’
আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কোনো অবস্থায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ হবে না। আমরা এটা করবোই। মওদুদ আহমেদরা এটা ঠেকাতে পারবে না।’’
জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার চক্রান্তকারীদের বিচারের আওতায় আনায় আইন পাস হওয়াও পরদিন মওদুদ আহমেদ বলেছিলেন, ‘‘এই আইনের মাধ্যমে বিরোধীদলকে দমন করা হবে।’’
মওদুদের এই বক্তব্য প্রত্যাখান করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমি আশ্চর্য হলাম, বিকৃত রাজনৈতিক সচেতনাসম্পনন্ন কোনো এক রাজনীতিবিদ বললেন, এই আইনটি হলে বিরোধী দলকে দমন করা যায়। আমরা ঘৃণাভরে তার এই অরাজনৈতিক বক্তব্য প্রত্যাখান করছি। এই বিচারকে যারা বাধাগ্রস্ত করবে, যেকোনোভাবে হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’
মওদুদের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘উনার ভীত হওয়ার কারণ এই, রাজনৈতিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।’’
আইনটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কদিন আগে পার্লামেন্টে একটা বিশাল কাণ্ড ঘটে গেল। শুনলাম, সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে সরকারি দলের মন্ত্রীর ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও সব পার্লামেন্টারিয়ান দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধাদানকারীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’’ সুরঞ্জিত বলেন, ‘‘আমার ধারণা এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে।’’
সাংসদদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি সাংবিধানিক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য আইন তৈরির আহবানও জানান সুরঞ্জিত।
৯০ এর গণআন্দোলনের অন্যতম নেতা আব্দুর সাত্তার টিংকুর স্মরণসভায় এসে তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি আন্দোলনে অনেক নায়ক থাকে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নেতা টিংকু এক ব্যতিক্রমী নেতা ছিলেন।’’
বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার চাঁদপুরের বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকারকে তিনি সরাবেন না। তবে ল্যাংড়া, লুলা করবেন। চিরসুখী জন ভ্রমে কী কখন ব্যথিত বেদন বুঝিতে কি পারে। খালেদা জিয়া ল্যাংড়া-লুলা হওয়ার বেদনা বুঝেন। তিনি অন্যের জীবনও ব্যথিত দেখতে চান।’’
তিনি এসময় খালেদার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘‘আমরা বর দিনু যে, আপনি ব্যর্থ রাজনীতিবিদদের বিভ্রান্ত পরামর্শে না গিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য আপনার ভূমিকা পালন করুন।’’
আলোচনা সভার বিশেষ বক্তা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল বলেন, ‘‘দেশের একটা ক্রান্তিকাল চলছে। আজকে যে জিনিসটা ৪০ বছরে হয় নি। সেই জিনিসটা হচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া চলছে। এই বিচার বন্ধের চক্রান্ত চলছে। ষড়যন্ত্র হচ্ছে দেশে এবং বিদেশে।’’
তিনি এসময় দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘‘ষড়যন্ত্রের ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়তো স্থবির হবে, বানচাল হবে না। বিচার অবশ্যই বাংলার মাটিতে হবে।’’
সংগঠনের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফয়েজউদ্দীন মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মিজি প্রমুখ।