তিনি বলেন, “বিএনপিই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশকে কিছু দিতে পারবে না। আওয়ামী লীগে যারা দেশপ্রেমিক আছেন, তারা দল ছেড়ে চলে আসুন। সম্মানজনক পদ দেয়া হবে।”
খুলনা অভিমুখে রোডমার্চের প্রথম দিন ঢাকা থেকে ২২৪ কিলোমিটার পার হয়ে পাবনার দাসুরিয়া মোড়ে প্রথম পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সকাল সোয়া দশটায় গুলশানের বাসা থেকে রওনা করে বেলা তিনটায় দাসুরিয়া মোড়ে পৌঁছান। এখানে তিনি ৪০ মিনিট বক্তৃতা করেন। চারটার দিকে পথসভা শেষে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয় রোডমার্চের বহর।
খালেদা জিয়া বলেন, “বতর্মান সরকার দিশেহারা হয়ে গেছে। তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। পাবনায় হেমায়েতপুর তাদের জন্য ঠিক করে রাখা দরকার।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সময় অনেক ওয়াদা করেছিল। কোনোটিই পূরণ করেনি। ১০ টাকায় চাল, বিনামূল্যে সার, ঘরে ঘরে চাকরি- কিছুই দেয়নি। সারের মূল্য বিএনপি সরকারের চেয়ে তিনগুণ বাড়িয়েছে। বিএনপি সার দিত ২৬০ টাকা বস্তা। এখন এক হাজার ৬০ টাকা। এখন মানুষের বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে গেছে। মানুষ তিন বেলা পেট ভরে খেতে পায় না। সব জিনিসপত্রের দাম বেশি। আজ পত্রিকায় দেখলাম তেলের দাম বেড়েছে। এখন যে অবস্থা তেল ছাড়া শুধু লবণ-ভাত খেতে হবে।”
তিনি বলেন, “এই সরকারের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। আপনারা ছেলেমেদের স্কুলে পাঠিয়ে নিরাপত্তা বোধ করেন না। মানুষ ঘরের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ করে না।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সোনার ছেলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ আরো কতলীগ এরা সব গুণ্ডাগিরি করতে নেমেছে। মানুষের ঘরবাড়ি, জমি, হিন্দুদের বাড়ি দখল করছে। এটা তাদের পুরানো অভ্যাস। স্বাধীনতার পরেও তারা এই কাজ করেছিল। তারা শুধু একের পর এক লুট করছে। শেয়ারবাজার থেকে আওয়ামী লীগের বড় বড় লোকেরা লুট করেছে। সেজন্য অর্থমন্ত্রী তদন্ত করেও নাম প্রকাশ করতে সাহস পাননি।”
খালেদা জিয়া বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই শেয়ারবাজার লুট হয়। বিএনপি থাকলে হয় না। এই টাকা তারা দেশেও রাখে না। ডলারে পরিণত করে বিদেশে পাচার করে। ফলে ডলারের দাম বেড়ে যায়। এই জন্য শেয়ারবাজারের লোকজন আত্মহত্যা করেছে। আন্দোলন করেছে। তাদের একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, বিড়ালকে শুঁটকির পাহারা দিতে দেয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ধান উঠছে। কিন্তু কৃষক ভাইয়েরা ধানের মূল্য পাচ্ছে না। অপরদিকে কৃষি উপকরণ অধিক দাম দিয়ে কিনতে হয়। পাটের মূল্যও কৃষক পায় না। এই কৃষককে বাঁচাতে হবে। কয়েকদিন আগে কোরবানির ঈদের আগের দিন ঢাকার হাটে গরু পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের লোকেরা গরু আটকে রেখেছিল।”
তিনি বলেন, “ঢাকা থেকে আসতে আসতে রাস্তার দুরবস্থা দেখলাম। রাস্তার মন্ত্রী সাহেবকে বলতে চাই, রাস্তার এই দুরবস্থা কেনো। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই অবিলম্বে রাস্তা ঠিক করা উচিত অথবা ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া উচিত।” মন্ত্রী দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সরকারে থাকতে যমুনা সেতু করেছি। তখন আওয়ামী লীগ বাধা দিয়েছিল। ভিত্তিপ্রস্তর করার দিন হরতাল দিয়েছিল। তারপরও আমরা সেতু নির্মাণ করেছি। সেতু নির্মাণের অভিজ্ঞতা বিএনপির আছে। এই সরকার দুর্নীতি করায় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাইকা টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। এই সরকার পদ্মা সেতু করতে পারবে না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুটি পদ্মা সেতু হবে। একটা মাওয়ায় আর একটা দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায়।”
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় ছিল দেশের সম্পদ লুট করেছে। বিদেশে পাচার করেছে। ব্যাংক ডাকাতি হয়েছে। ’৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছে। এক লাখ মানুষ মারা গেছে। আবারো একই অবস্থার দিকে দেশকে নিয়ে যাচ্ছে। রিজার্ভ না থাকলে দেশ চালাবে কিভাবে? অথচ প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করে বলেছেন, তার বাবার সময় রিজার্ভ ছিল না সেজন্য কি দেশ চলেনি? আমি বলেছি, রিজার্ভ ছিল না বলেই তো দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।”
তিনি জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন করে বলেন, “এদের হাতে কি দেশ নিরাপদ? আপনারা কি নিরাপদ?” তখন উপস্থিত জনতা সমস্বরে ‘না’ সূচক জবাব দেয়। তখন খালেদা জিয়া বলেন, “এ থেকে পরিবর্তন করতে পারবে বিএনপি ও চারদলীয় জোট।”
খালেদা জিয়া বলেন, “৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের পর জিয়াউর রহমান দেশের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তন করেছেন। দেশের মানুষ তিনবেলা খেতে পেয়েছে। মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পেরেছে। জিয়াউর রহমান ছেলেমেয়েদের নিয়ে খাল কেটেছেন। হিজবুল বাহারে ঘুরাতে নিয়ে গেছেন। বিএনপি যতবার ক্ষমতায় এসেছে এই দেশের উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাট ব্রিজ সব কিছু আমরাই করেছি। এখন বিদ্যুৎ নাই, গ্যাস নাই। শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মা-বোনেরা বাসায় গ্যাস পাচ্ছে না। বিদ্যুতের কাজ আমরা যা শুরু করেছিলাম। তা চালু করলে এখন কোনো সমস্যা থাকত না। মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীন বিদ্যুতের সব কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন দলীয় লোকদের রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট করতে দিয়েছে। বিনা টেন্ডারে নিজেদের দল ও আত্মীয়-স্বজনদের কোটি কোটি টাকার কাজ দিয়েছে। রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট করায় ১২ হাজার কোটি টাকা দায় চেপেছে গ্রাহকদের ওপর। এসব আমার কথা নয়। পত্রিকায় লিখেছে।”
তিনি বলেন, “সরকার প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিচ্ছে। ১৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়ে গেছে। আপনার যদি ব্যাংকে টাকা থাকেও বড় চেক দিলে ব্যাংক টাকা দিতে পারছে না। কারণ, সরকার ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে গেছে। কয়েকদিন পর ব্যাংকগুলোও দেউলিয়া হয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, “সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। তাদের পেছনে জনগণ নেই। তারা ভালো করে জানে। তাই সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ ও জামায়াত এক হয়ে আন্দোলন করেছিল। তখন আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। তারা বলেছিল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। এর জন্য তারা আন্দোলন করে অনেক মানুষ হত্যা করেছে। এখন তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে।”
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “জামায়াত যখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকে তখন তারা যুদ্ধাপরাধী হয় না। যখন বিএনপির সঙ্গে থাকে তখন যুদ্ধাপরাধী হয়ে যায়। তারা এখন বলে, কাদের সিদ্দিকী নাকি মুক্তিযোদ্ধা নয়। কর্নেল অলি খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তার ওপর আক্রমণ করেছে।”
পাবনা জেলা বিএনপির সভাপতি মেজর অব. কে এস মাহমুদের সভাপতিত্বে এই পথসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ফজলুর রহমান পটল, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সোবহান, বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, শিরিন সুলতানা, জামায়াতের ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপি, জেলা বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান তোতা, সেলিম রেজা হাবিব, নিলোফার চৌধুরী মনি এমপি, আলাউদ্দিন, ছাত্রদলের আমিরুজ্জামান শিমুল, আনিসুর রহমান খোকন, জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুর রশীদ, সেক্রেটারি আবু তালেব মন্ডল ও ঈশ্বরদী বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন।