এপিপি, কলকাতা: টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়ে যৌথ-সার্ভে কমিটি গড়ায় সহমত পোষণ করেছে ভারত। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ সরকারকে প্রকল্প নিয়ে সব ধরণের তথ্য দিয়েও সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। শুক্রবার দিল্লি সফররত দুই উপদেষ্টা গরহর রিজভী ও মশিউর রহমান ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ওই দুই উপদেষ্টার কাছে ড. মনমোহন সিং এসব কথা বলেন। শুক্রবার রাতে টেলিফোনে এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার সৈয়দ এনামুল হক চৌধুরী বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “বাংলাদেশের ক্ষতি হবে এমন কোনো উদ্যোগ ভারত সরকার নেবে না বলে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমহোন সিং আমাদের উপদেষ্টাদের জানিয়েছেন।” এদিন একটি বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়েছে। যেটি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার। পরে তার কাছে বিষয়টি পরিস্কার করার অনুরোধ করলে এনামুল হক জানান, টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বির্তকের কোনো অবকাশ নেই বলে মনে করছে ভারত সরকার। কারণ ভারত এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, যা বাংলাদেশের ক্ষতি করে। অন্তত এমনটাই আশ্বস্ত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। প্রেস মিনিস্টার আরো বলেন, “ভারত এনিয়ে সব ধরণের তথ্য দেবে বাংলাদেশকে। প্রয়োজনে যৌথ সার্ভের করার কথাও জানানো হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপদেষ্টারা বাংলাদেশ থেকে একটি টেকনিক্যাল কমিটি ভারত সফর করার আগ্রহ প্রকাশ করলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন বলেও জানান প্রেস মিনিস্টার। মনিপুর সরকার এবং ভারতের জল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সঙ্গে যে বাঁধ দেয়ার চুক্তি হয়েছে, তা করার আগে করা তাদের যৌথ সার্ভে রিপোর্টও বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হবে বলে ভারত সরকার বাংলাদেশের দুই উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে ভারতের বক্তব্য, টিপাইমুখ বাঁধ কোনো সেচ প্রকল্প নয়। এটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। উল্লেখ্য, বুধবার দুপুরের বাংলাদেশের ওই দুই উপদেষ্টা ভারতের রাজধানী দিল্লিতে পৌঁছান। বৃহস্পতিবার তারা দেশটির অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ছাড়াও বিদ্যুৎ, পানি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পারস্পরিক বিষয়ে আলোচনা করেন।
0 Comments
এপিপি রিপোর্ট: ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কে স্বাগত জানিয়ে জামায়াতে ইসলামী ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘‘ট্রানজিটসহ কোনো চুক্তির বিরোধী নয় জামায়াত। তবে সব চুক্তি হতে হবে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করে।’’ সোমবার দুপুরে মগবাজার আলফালাহ মিলনায়তনে ঢাকা মহানগরী জামায়াত আয়োজিত পেশাজীবীদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আজহার বলেন, ‘‘ভারত এ পর্যন্ত একটি চুক্তিও বাস্তবায়ন করেনি। ৪১ দিনের জন্য ফারাক্কা বাঁধ চালু করে ৪১ বছরেও তা বন্ধ করেনি। ফারাক্কার মাধ্যমে ভারত পানি আটকে রাখায় উত্তাল পদ্মানদী মরে গেছে। দেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধান সংশোধন করে বেরুবাড়ী ভারতকে দিয়েছেন। অথচ তার বিনিময়ে আজ পর্যন্ত তিন বিঘা করিডোর পায়নি বাংলাদেশ।’’ তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘‘চুক্তি করতে আমাদের কোনো বাধা নেই। তবে দেশের স্বার্থ বিরোধী কোনো চুক্তি বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবেনা।’’ সারা পৃথিবীতে একদেশ আরেক দেশে ট্রানজিটের সুবিধা পায় মন্তব্য করে আজহার বলেন, ‘‘ট্রনজিটের মাধ্যমে ভারতকে করিডোর দেয়া যাবে না। করিডোর দিয়ে দেশের নিরাপত্তা ভারতের হাতে দেয়ার মানে দেশের স্বাধীনতাকে গলা টিপে হত্যা করা।’’ পানি চুক্তি নিয়ে আজহার বলেন, ‘‘টিপাই মুখে বাঁধ দেয়া হবেনা এ প্রতিশ্রুতিতে ভারত রাজি হলে তবেই পানি চুক্তি করতে হবে।’’ এসময় তিস্তা নদীর পানির ৫০ ভাগ বাংলাদেশকে দেয়ার দাবিও জানান তিনি। পাটের মত চিকিৎসা শিল্পকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘ডাক্তারদের জেলে ঢুকিয়ে সমস্যা সমাধান হবে না এতে সমস্যা আরো বাড়বে। ভবিষ্যতে ডাক্তাররা মুমূর্ষু রোগীকে গ্রহণ করবেন না। বাধ্য হয়ে রোগীরা ভারতে চলে যাবেন।’’ চোরাপথে বিদেশীদের সহযোগিতায় এ সরকার ক্ষমতায় এসে জনগণ ও দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘জনগণের ভোটে তারা ক্ষমতায় আসেননি বলেই দেশ ও দশের জন্য তারা কাজ করছেন না।’’ দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ধনীদের ব্যবহৃত জিনিস-পত্রের দাম বাড়ছেনা। কিন্তু গরীব মানুষ পানিভাতের সঙ্গে যে কাচাঁমরিচ খায় তার দাম বাড়ছে। এক কথায় গরীবের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। এতে প্রমাণিত হয় সরকার জনগণের বন্ধু নয় শত্রু।’’ জামায়াত নেতা সাঈদীর বিচার কালো আইনে করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘যা খুশি তা রায় দেবেন, আর দেশের মানুষ তা মেনে নিয়ে ঘরে বসে থাকবে। তা ভাববেন না। যে সময়ের ঘটনা নিয়ে বিচার হচ্ছে, সাঈদী সে সময় জামায়াতে ইসলামী করেন নি।’’ আওয়ামী লীগ শক্তের ভক্ত নরমের জম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘কয়েকদিনের মধ্যে আলোচনা করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগরী জামায়াতের আমির রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য ডাক্তার শফিকুর রহমান, তাসনিম আলম প্রমুখ। এপিপি রিপোর্ট : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা’ সোনিয়া গান্ধীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবদান রাখার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো বিদেশিকে দেওয়া এটিই সর্বোচ্চ সম্মাননা। শাশুড়ির পক্ষে মরণোত্তর সম্মাননা গ্রহণ করে ভারতের কংগ্রেস দলের সভানেত্রী ও ক্ষমতাসীন ইউপিএ জোটের চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘এ সম্মান শুধু ইন্দিরা গান্ধীকে নয়, প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে ভারত ও ভারতের মানুষকেই সম্মান জানানো হলো।’
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশিদের মধ্যে ইন্দিরার ভূমিকা সবচেয়ে উজ্জ্বল। তাই তাকে দিয়েই এ সম্মননা প্রদান প্রক্রিয়া শুরু করলো সরকার, জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এদিকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বঙ্গভবনের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি বিরোধী রাজনৈতিক জোটের কেউই। তবে বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ অবশ্য এসেছিলেন। সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্দিরাকে দেওয়া ‘মরণোত্তর’ সম্মাননা সোনিয়া গান্ধীর হাতে তুলে দেন। এর আগে ইন্দিরাকে দেওয়া মানপত্রের বাংলা সংস্করণ পাঠ করে শোনান মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম আবদুল আজিজ। অটিজম বিষয়ক আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনে অংশ নিতে ঢাকা এলেও মূলত এ অনুষ্ঠানটিই ছিল সোনিয়ার ঢাকা সফরের প্রধান আকর্ষণ। ড. মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হলেও কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনায় সোনিয়ার পরামর্শকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ২৪ ঘণ্টার সফরে গত রোববার রাত পৌনে নয়টায় ঢাকা আসেন সোনিয়া গান্ধী। শাশুড়ির পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করে সোনিয়া গান্ধী তার অনুভূতির কথা জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী যদি আজ আমাদের মধ্যে থাকতেন তবে এই অসামান্য সম্মানে তিনি নিশ্চয়ই পুলকিত হতেন। এই সম্মাননা অবতর্মান থাকা মানুষকে আমাদের মাঝে এনে দিয়েছে।’ ঢাকা সফরে আসতে পেরে নিজের ভালো লাগা ও আবেগের কথা জানান সোনিয়া। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সফর আমার কাছে শুধু অন্য একটি দেশ সফরে যাওয়া নয়। এটা এক অন্য রকম অনুভূতি।’ ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকালে নয়াদিল্লিতে যাত্রাবিরতির দিন বিমানবন্দরে স্বামী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে উপস্থিত থাকার কথাও স্মরণ করেন সোনিয়া। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সোনিয়া গান্ধী। তিনি বলেন, ‘এ সম্মাননা শুধু ইন্দিরাকে নয়, বরং এতে পুরো ভারতকেই সম্মাননা জানালো বাংলাদেশ।’ ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দীর্ঘজীবী হোক’ --এই বলে বক্তব্য শেষ করেন তিনি। এর আগে সোমবার বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বঙ্গভবনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সোনিয়া দরবার হল প্রাঙ্গণে আসেন। এ সময় সোনিয়াকে রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনের দরবার হলের বাইরের দেয়াল ও বিভিন্ন স্থানে থাকা ছবি ও স্মারক ঘুরে দেখান। সাড়ে পাঁচটায় সোনিয়া গান্ধীকে সঙ্গে নিয়ে দরবার হলে প্রবেশ করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। তারা মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে তাদের সম্মান জানান। অভ্যাগত অতিথিরা বেলা চারটা থেকেই বঙ্গভবনের দরবার হলে আসন গ্রহণ করেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। এছাড়া অটিজম সম্মেলনে আসা বিদেশি অতিথিরাও এসেছিলেন বঙ্গভবনে। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার খানেক অভ্যাগত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন বলে বঙ্গভবন সংশ্লিষ্টরা জানান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিসভা বিভাগ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় প্রথমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, সোনিয়া গান্ধী ও রাষ্ট্রপতি বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর অনবদ্য ও সাহসী অবদানের কথা সবাই তাদের বক্তৃতায় উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সোনিয়া গান্ধীর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা স্মারক ও মানপত্র তুলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে ইন্দিরা গান্ধী শুধু আমাদের সহায়তাই করেননি, আমাদের মানসিকভাবেও চাঙ্গা রেখেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ইন্দিরা গান্ধী শুধু বিশ্বজনমত গড়ে তুলেই ক্ষান্ত হননি, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধুর মুক্ত করার চষে বেড়িয়েছিলেন গোটা দুনিয়া।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়াও ছিল তৎকালীন বিশ্বে এক অনন্য নজির।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানের কথা ভোলার নয়।’তিনি বলেন, ‘সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সীমান্ত পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারত শুধু আশ্রয়ই দেয়নি, পাশাপাশি বাংলাদেশের সরকারকে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক ও মানসিক সব ধরনের সমর্থন দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধী ওই দুঃসময়ে পাশে ছিলেন বলেই আমরা আমাদের বিজয় দ্রুত অর্জন করতে পেরেছিলাম।’ ‘ইন্দিরার ভূমিকা আমাদের কোনও দিনই ভুলবার নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবেও গান্ধী পরিবারের কাছে ঋণী’, বলেন হাসিনা। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর আমাকে ও আমার বোনকে ইন্দিরা গান্ধীই ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন।’ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যের সুসম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। সোনিয়া গান্ধী ও তার পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘায়ু কামনা করেন শেখ হাসিনা। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে সোনিয়াকে এই অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া স্বাধীনতার সর্বোচ্চ পদক গ্রহণ করতে সোনিয়া গান্ধী রাজি হওয়ায় আমরা আনন্দিত, সেইসঙ্গে তাকে ধন্যবাদ জানাই।’ এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বক্তব্য রাখেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে বিদেশীদের সম্মাননা জানানো স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি। দীপু মনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে একজন বিদেশি সরকারপ্রধান হিসেবে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা আমাদের ভুলবার নয়। তিনি আমাদের জন্য অসামান্য কাজ করেছেন।’ বিদেশি বন্ধুদের বাছাই করার ব্যাপারে কমিটির প্রক্রিয়ার কথা জানান দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশিদের সম্মান জানাতে গত ১৪ মাস একটি কমিটি কাজ করেছে। তারা বিভিন্ন সূত্র থেকে সুপারিশ পাওয়া ব্যক্তিত্বদের সম্মাননা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কমিটির ইন্দিরা গান্ধীই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিদেশি বন্ধু বলে বিবেচিত হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয় বলে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টায় সফল হয়েছেন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা ছাড়াও শরণার্থীদের থাকা-খাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।’ ‘৪০ বছর পর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কারণ আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে বিষয়টির রেকর্ড রাখতে চাই। ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন জানতে পারেন ইন্দিরা আমাদের জন্য কী করেছেন’, বলেন দীপু। তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য আজকের দিনটি একটি উল্লেখযোগ্য দিন।’‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক দীর্ঘজীবী হোক’ বলে দীপু মনি তার বক্তব্য শেষ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। মানপত্র ও সম্মাননা স্মারক: মানপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘শুরু থেকেই নানা প্রতিকূলতার পরও বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পাশে ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে তিনি আশ্রয় দিয়েছিলেন। প্রতিনিয়ত কূটনৈতিকভাবে নানা সমস্যার মোকাবিলা করে এ দেশের মানুষের মুক্তিসংগ্রামে দৃঢ়তার সঙ্গে সাহস জুগিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশিদের জন্য এই সর্বোচ্চ সম্মাননা পদক হিসেবে দেওয়া হয় ১৮ ক্যারেটের ২০০ ভরি ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি স্মারক। স্বর্ণ কেনা হয়েছে ঢাকার একটি প্রসিদ্ধ জুয়েলার্স থেকে। সৌহার্দ্য, শান্তি ও অর্জনের প্রতীক হিসেবে কদমগাছের নকশা আঁকা ষোড়শ শতাব্দীর টেরাকোটার আদলে তেরি পদকের নকশা করেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও শিল্পী হাশেম খান।সেগুন কাঠের ফ্রেমে ভাঁজ করা বক্সের মধ্যে দুই পাশে দুটি কাঠের প্লেট রয়েছে। অর্ধ শতাব্দী পুরনো গাছের গুঁড়ি থেকে এ কাঠ সংগ্রহ করা হয়। প্লেট দুটি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ৮ দশমিক ২৫ ও ৮ দশমিক ৫ ইঞ্চি। পদকের বাঁ পাশের প্লেটটিতে বাংলা ও ইংরেজিতে স্বর্ণের ওপর খোদাই করে লেখা রয়েছে ‘শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, রাষ্ট্রনায়ক, ভারত প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রীকে (২৪ জানুয়ারি ১৯৬৬ থেকে ২৪ মার্চ ১৯৭৭; ১৪ জানুয়ারি ১৯৮০ হতে ৩১ অক্টোবর ১৯৮৪) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য বাঙালি জাতির শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সর্বোচ্চ নিদর্শনস্বরূপ ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ স্মারক প্রদান করা হলো। ১০ শ্রাবণ ১৪১৮, ২৫ জুলাই ২০১১ খ্রি. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বঙ্গভবনে প্রদত্ত।’ নিচে বাঁ পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ডান পাশে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের খোদাই করা স্বাক্ষর রয়েছে। পদকের ডান পাশের প্লেটে রয়েছে এ অঞ্চলের ষোড়শ শতাব্দীর টেরাকোটা নকশার আদলে কদমগাছের প্রতীক। এ প্রতীকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের পারস্পরিক সম্পর্ক অসাম্প্রদায়িক ও গণতন্ত্রকামী মূল্যবোধের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে বোঝানো হয়েছে। এপিপি, কলকাতা : তিনবিঘা করিডোরের উপর একটি উড়ালপথ নির্মাণের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে প্রস্তাব করেছে। উড়ালপথ নির্মাণ হলে ভারতীয় ভূখন্ডে থাকা দহগ্রাম ও আঙ্গারপোতা ছিটমহলকে বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি ২৪ ঘণ্টা যুক্ত রাখা সম্ভব হবে। কলকাতার মহাকরণ সূত্রে জানা গেছে, ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব টি এস তিরুমূর্তি এবিষয়ে রাজ্যে মুখ্য সচিব অর্ধেন্দু সেনকে চিঠি পাঠিয়েছেন। এ চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের পক্ষে বলা হয় ভারতীয়দের যাওয়া-আসার জন্য একটি উড়ালপথ নির্মাণ করা হোক। এই উড়ালপথের নিচ দিয়ে বাংলাদেশিরা যাতায়াত করবে। এতে তিনবিঘা করিডোর দিয়ে দু’দেশের নাগরিকরা ২৪ ঘণ্টা যাতায়াত করতে পারবেন। চিঠিতে আরো বলা হয়, ভারত সরকার চায় এ উড়ালপথটি রাজ্য সরকার তৈরি করুক। পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রসচিব সমর ঘোষ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কোচবিহার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর ভারত সরকারকে আমাদের মতামত জানাবো।’ উল্লেখ্য, ওই দুটি ছিটমহলের বাসিন্দাদের বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করতে ১৯৯২ সালে তিনবিঘা করিডোর চালু করা হয়। তবে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা এ করিডোর ব্যবহার করতে পারেন বাংলাদেশিরা। এই অসুবিধা দূর করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উড়ালপথের প্রস্তাব দেওয়া হয়। উড়ালপথ ব্যবহার করবে ভারতীয়রা এবং নিচের সড়ক ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করবে বাংলাদেশিরা। |
নিউজ সার্চ
All
নিউজ আর্কাইভ
May 2018
|