স্বাধীনতার স্বপক্ষের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, বামপন্থি এসব দলের নেতাদের মধ্যে এ নিয়ে জোর আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
বাম-গণতান্ত্রিক দলগুলোর সমন্বয়ে আলাদা জোট গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই যৌথ কর্মসূচি দিয়ে অগ্রসর হওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে এসব দলের নেতারা জানান।
তারা জানান, সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকট নিরসন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, শেয়ারবাজার কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি।
দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পুর্ণ ভেঙে পড়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যে সব প্রতিশ্রুতি ছিলো তার কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি। বরং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির উল্টো স্রোতে সরকার অগ্রসর হচ্ছে বলে এসব দলের নেতারা অভিযোগ করেন।তাদের মতে, ‘৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলে সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক করে তুলেছে।
এক দিকে সরকারের ব্যর্থতা যেমন দিন দিন ভারি হচ্ছে, অন্যদিকে সেই সুযোগে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক, উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠী আবারো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এ পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, বাম শক্তির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি বলে এসব দলের নেতারা মনে করছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্য থেকেও এ ধরণের উদ্যোগ রয়েছে।
১৪ দলের বাইরে সিপিবি ও বাসদ এসব ইস্যুতে ইতিমধ্যে কয়েকটি যৌথ কর্মসূচি পালন করেছে। গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার বিষয়েও এ দুই দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ছোট ছোট বামপন্থি দলগুলোর সমন্বয়ে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা গড়ে উঠেছে।
এ ছাড়া ১৪ দলের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি, ওয়ার্কার্স পর্টি, জাসদসহ অন্যদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিষয়টি আলোচনা চলছে। এই প্রক্রিয়ায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতিও রয়েছে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামও এই প্রক্রিয়া আসতে পারে বলে জানা গেছে।
সিপিবির উদ্যোগে এসব দলের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। ঈদের পর এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে বলে এসব দলের নেতারা জানিয়েছেন।তবে ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ এই মুহূর্তেই কোনো জোটগত প্রক্রিয়ায় যেতে চাচ্ছে না।
তারা চলমান সংকটের বিরুদ্ধে কথা বলতে ও আওয়ামী লীগকে চাপে রাখতে অন্যান্য বাম-গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে ইস্যু ভিক্তিক আন্দোলনে থাকবে বলে দল দু’টির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘সরকারের ব্যর্থতার বোঝা আমরা বহন করবো। সরকারের মন্ত্রীরা আবোল-তাবোল কথা বলছেন। ১৪ দলের ২৩ দফায় যা ছিলো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও সেগুলো ছিলো। সে সব প্রতিশ্রুতির কোনো বস্তবায়ন নেই।’
তিনি বলেন, ‘১৪ দল নিস্ক্রিয় হয়ে আছে। এই অবস্থায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বামপন্থি দলগলোর সঙ্গে দ্রব্যমূল্যসহ জনজীবনের সংকট এবং ’৭২ এর মুল সংবিধানে ফিরে যাওয়ার দাবিতে আমরা রাজপথে আন্দোলনের চিন্তাÑভাবনা করছি। এসব ইস্যুতে যারা একমত তাদের ঐক্যবদ্ধ করার একটা উদ্যোগ আছে।’
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘১৪ দল, মহাজোট কোনোটারই কার্যকারিতা নেই। যদিও এটি কার্যকর হওয়া না হওয়া আওয়ামী লীগের উপর নির্ভর করে। তবে আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দলের অন্য যে শরিক রয়েছে বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।’
গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম বলেন, ‘দেশে একটা রাজনৈতিক সংকট চলছে। আওয়ামী লীগের একলা চল নীতি এর জন্য দাযী। চলমান সংকট এবং সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এক জায়গায় আসার চেষ্টা করছি। সিপিবি, বাসদ, জনসংহতি সমিতির সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। ঈদের পর তৎপরতা শুরু হবে।’
ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, ‘সরকার বিপর্যয়ের মধ্যে চলে গেছে। কোনো বিষয়েই সরকার জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। এই সুযোগ নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী আবারো তৎপর হয়ে উঠছে। দেশের মানুষের প্রতি আমাদেরও কম বেশী দায়িত্ব রয়েছে। আমরা ঈদের পর দলগতভাবে মাঠে নামবো। কমন ইস্যুতে সমমনাদের সঙ্গে আমরাও আন্দোলনে থাকবো।’
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেন, ‘বর্তমান সংকট থেকে উত্তোরণে আমরা আন্দোলনে রয়েছি। এই আন্দোলনে অপরাপর বাম-গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ যৌথ ও আন্দোলনের যাওয়ার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যেই আমরা বাসদ, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, জনসংহতি সমিতি, গণতন্ত্রী পার্টির সঙ্গে আলোচনা করেছি। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদের সঙ্গেও আলোচনা হবে। অনানুষ্ঠানিক কথা বার্তা হয়েছে। যৌথ মুভমেন্টের মধ্য দিয়ে স্থায়ী জোটের দিকে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’