ঢাকা: দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) এদেশের ব্লগারদের গতিবিধির ওপর নরজদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও র্যাবকে এই কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। একই সাথে এক্ষেত্রে অনুসন্ধান বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছে সরকার। তবে ব্লগ বা অন্য কোনো মাধ্যমে কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কিছু লিখছেন কিনা এদিকটা দেখছে র্যাব। একইভাবে লেখাকে কেন্দ্র করে উগ্রপন্থীদের প্রাণঘাতি হামলা থেকেও তাদের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করবে বিষেশায়িত এই সংস্থার সদস্যরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে যে লিখবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একইভাবে উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারের এমন নির্দেশের প্রেক্ষিতেই মাঠে নেমেছে র্যাব। এই এলিট ফোর্সের সদস্যরা উগ্রপন্থীদের ধরতে জোরদার অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশাপাশি প্রয়োজনে র্যাব ব্লগারদেরও আইনের আওতায় আনবে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে খুন-ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধ। তাছাড়া অল্পসময়ের ব্যবধানে খুন হয়েছে তিনজন ব্লগার। আর ব্লগার খুনের বিষয়টি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা হয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারের মন্ত্রী এবং শীর্ষ কর্মকর্তারাও ব্লগারদের নানাভাবে সতর্ক করেন। বিশেষ করে ব্লগারদের লেখালেখি এবং চলাচলের ক্ষেত্রে আরো বেশি সাবধান হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কারণ ব্লগসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করায় ব্লগারদের সাথে উগ্রপন্থীদের মতাদর্শগত বিরোধ তীব্র হচ্ছে। আর ওই বিরোধের জের ধরেই একের পর এক ব্লগার খুনের ঘটনা ঘটছে বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে। তারপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি স্পষ্ট ভাষায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ব্লগ বা অন্য কোনো মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কেউ লেখালেখি করলে তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ প্রধানও একই কথা বলেছেন।
সূত্র জানায়, এদেশে বর্তমানে ব্লগার ও উগ্রপন্থী ইস্যু আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুটি গ্রুপের মতাদর্শগত কারণে কয়েকজন ব্লগার খুন হয়েছেন। আর ঝুঁকিতে আছেন আরো অনেকে। ২০১৩ সাল থেকে এদেশে ব্লগার ও উগ্রপন্থীদের যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে তা কোনো ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে র্যাবের পক্ষ থেকে নতুন করে আভিযানিক কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইনশৃংখলা বাহিনীও যে কোনো ধরনের সহিংতা বা নাশকতা এবং উস্কানি মোকাবেলায় জিরো টলারেন্স দেখাবে। তবে বিশেষায়িত বাহিনী র্যাব ইতিপূর্বে চরমপন্থীদের দমন করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি তালিকাভুক্ত পুরস্কার ঘোষিত অনেক সন্ত্রাসীও র্যাবের ভয়ে পালিয়ে আছে। তবে এখন নতুন প্রজম্মের কিছু সন্ত্রাসী মাথাচাড়া দেয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি কয়েকটি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার পর নতুন সন্ত্রাসীরা গোপন আশ্রয়ে চলে যায়। তাছাড়া র্যাবের নজরদারির কারণে ব্লগ বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ধর্মকে কটাক্ষ করে লেখাও বন্ধ হয়ে যাবে ধারণা করা হচ্ছে। একইভাবে উগ্রপন্থীরা যেভাবে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে তাও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
সূত্র আরো জানায়, ব্লগ বা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ধর্ম নিয়ে যারা লেখালেখি করে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের তালিকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এসেছে। তাদের নিরাপত্তার দিকটিও দেখছে র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। একইভাবে তারা ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করছে কিনা তাও মনিটর করছে র্যাব। বর্তমানে র্যাবের তালিকায় আছেন আসিফ মহিউদ্দিন, আবুল কাশেম, আলমগীর হোসেন, অন্য আজাদ, বিপ্লব কান্তি দে, দাড়িপাল্লা ধমাধম, নিতাই ভট্টাচার্য, ইব্রাহীম খলিল সবাগ, (সুমন সওদাগর) কৈশীক, আহমেদ, নুরনবী দুলাল, পারভেজ আলম, রতন সন্যাসী, সৈকত চৌধুরী, শর্মী আমিন, সৌমিত্র মজুমদার (সৌম্য), আল্লামা শয়তান, (বিপ্লব) শুভজিদ ভৌমিক, সুমিত চৌধুরী, সৈকত বড়ুয়া, সুব্রত শুভ ও সুসান্ত দাসগুপ্ত উল্লেখযোগ্য। এই তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছেও রয়েছে।
এদিকে ব্লগারদের ওপর নজরদারি এবং উগ্রপন্থীদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাব সবসময় আইনি প্রক্রিয়ায় কঠোর ভূমিকা পালন করে থাকে। কয়েকজন ব্লগার খুনের ঘটনা তদন্তে দেখা গেছে মূলত ব্লগের লেখালেখির কারণে তারা উগ্রপন্থীদের টার্গেট হয়েছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্লগ, ইন্টারনেট বা যে কোনো সামাজিক মাধ্যমের ওপর র্যাব নজর রাখছে। তাতে যদি দেখা যায় কোনো ব্লগারকে কেউ হুমকি দিচ্ছে তখন র্যাব তার সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে। তাছাড়া উগ্রপন্থীরা যেমন অপরাধ করে ছাড় পাচ্ছে না, তেমনি সামাজিক মাধ্যমে কেউ আইন লংঘন করে কিছু লিখলে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেবে র্যাব।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা আইনশৃংখলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। যারাই উস্কানিমূলকভাবে ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করবে তাদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড়া দেয়া হবে না।