এপিপি রিপোর্ট : হাইকোর্টে বর্তমানে ৫৩৪টি মৃত্যুদণ্ডাদেশ (ডেথ রেফারেন্স) মামলা বিচারাধীন। নিম্ন আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায়ের পর এসব মামলা উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। দীর্ঘসূত্রতার কারণে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে না। অনেক মামলা প্রস্তুত হলেও বিভিন্ন কারণে তা শুনানি না করায় উচ্চ আদালতে জমেছে ফাঁসির মামলার জট। নিম্ন আদালতে চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হলেও উচ্চ আদালতে চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। সংশিল্গষ্ট আইনজীবীদের মতে, মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ হাইকোর্ট বেঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হলে দ্রুত এসব মামলার নিষ্পত্তি করা যাবে। জানা গেছে, হাইকোর্ট বিভাগে মোট ৬৫৬টি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১২২টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ৫৩৪টি মামলা বর্তমানে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে অনেক মামলা পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। হাইকোর্টে বর্তমানে চলতি বছরের ৪৭, ২০০৯ সালের ৮৩, ২০০৮ সালের ১৩৭, ২০০৭ সালের ১০২, ২০০৬ সালের ১১১ ও ২০০৫ সালের ৫৫টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে ২০০৫ সালের ১২০ এবং ২০০৬ সালের ১টি মামলা ও চলতি বছর নিষ্পত্তি হয়েছে ২১টি মামলা। বর্তমানে আদালতে শুনানির জন্য প্রস্তুত ৮টি মামলা ও বিজি প্রেসে পেপারবুক তৈরি রয়েছে ৯টি মামলার। আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলা, সাংসদ সুজন হত্যা মামলা, ভারতীয় নাগরিক জিবরান হত্যা মামলা ও অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামসহ অসংখ্য চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাও বিচারাধীন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্ট বিভাগে চারটি ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চে প্রতি মাসে গড়ে নিষ্পত্তি হচ্ছে ৫ থেকে ৬টি মামলা। আদালতে ছুটি এবং বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্ট বেঞ্চের এখতিয়ার পরিবর্তনের কারণে এসব ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানি করা হচ্ছে না। এদিকে পেপারবুক তৈরি হয়ে আদালতে না আসায় ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চে অন্য মামলার শুনানি হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর মামলা চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ, তালিকাভুক্ত মামলার তদন্ত ত্বরান্বিত, নিয়মিতভাবে আদালতে সাক্ষি হাজিরা নিশ্চিত, ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল, মামলা হাইকোর্টে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পেপারবুক তৈরি এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসকে সার্বিক সহায়তা করতে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, মনিটরিং সেলটি ঠিকমতো কাজ করছে না। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী নিম্ন আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলেও হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া এ সাজা কার্যকর করা যায় না। মামলার কোনো পক্ষ মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করুক বা না করুক, সরকারকে অবশ্যই হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণের মামলা করতে হয়। ফলে নিম্ন আদালতে দেওয়া সব মৃত্যুদণ্ডাদেশ হাইকোর্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু পেপারবুক তৈরি থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ মামলা নিষ্পত্তি করতে পার হয়ে যায় বছরের পর বছর। বর্তমানে হাইকোর্টে পৃথক দুটি বেঞ্চের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ মামলা পরিচালনার এখতিয়ার রয়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বেঞ্চের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া উপযুক্ত বিচারপতিদের এ ধরনের মামলা পরিচালনার এখতিয়ার দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, কনডেম সেলে তার দিন কাটে অমানুষিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে। তাই মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ মামলা যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি করা উচিত। প্রয়োজনে জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সমন্বয়ে বেঞ্চ পুনর্গঠন করে আরও বেঞ্চকে এ ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, যদি পেপারবুক তৈরি থাকে তাহলে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০টি ডেথ রেফারেন্স মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব। অনেক সময় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডেথ রেফারেন্স মামলা শুনানি হওয়ার কথা, কিন্তু দৈনিক কার্যতালিকায় ডেথ রেফারেন্স মামলা না থাকায় সেটি আর শুনানির জন্য থাকে না। তাতে বোঝা যায় পেপারবুক তৈরি নেই। সেদিন আদালত অন্য মামলা শোনেন। আইনজীবীরা জানান, মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ মামলায় পেপারবুক প্রস্তুত করা হলেই শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। নিম্ন আদালত নির্ধারিত সময়ে বা দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে রায় দিলেও উচ্চ আদালতে নানা জটিলতায় আটকে যায়। এর মধ্যে পেপারবুক জটিলতাই দীর্ঘসূত্রতার মূল কারণ। এটি তৈরি হলেই মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়। এজন্য কীভাবে দ্রুত পেপারবুক তৈরি করা যায় তার উপায় বের করতে হবে। রেটিং দিন : রেটিং.. ১২৩৪৫
0 Comments
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ এপিপি রিপোর্ট :পঞ্চমের পর সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায় সম্পর্কে এক সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় এরশাদ বলেছেন, এটি ঐতিহাসিক রায়, তবে আমি বিচলিত নই। তিনি বলেন, সব সময় আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রায় নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের এমন প্রতিক্রিয়ায় উপস্থিত সাংবাদিকরা কিছুটা বিস্মিত হন। রায় ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা এরশাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানতে এরশাদের বাসা ও পার্টি অফিসে ভিড় জমান। কিন্তু কাউকেই আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি এরশাদ। এরশাদ অনেকটা নিশ্চুপ ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাপা ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে অংশ নেন এরশাদ। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে সামান্য সময় কথা বলেন তিনি। রায়ের প্রসঙ্গ টেনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টের সমালোচনা করে এরশাদ বলেন, 'আমি বিচলিত, ভেঙে পড়েছি বলে খবর বের হচ্ছে, যা ঠিক নয়। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।' প্রসঙ্গত, গতকাল দুপুরে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জারি করা সামরিক শাসন সংবিধান পরিপন্থী ও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ওই সময়ে জনস্বার্থে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ বিশৃঙ্খলা এড়াতে মার্জনা করার কথা বলেছেন আদালত। রায়ে সামরিক শাসন জারি এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের দায়ে এইচ এম এরশাদের শাস্তির বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এপিপি রিপোর্ট : দেশে সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীকেও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। রায়ে বলা হয়, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আদেশ, সকল সামরিক আদেশ, সামরিক ফরমান, আইন ও আদেশ অবৈধ। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের আদেশও অবৈধ। তবে ওই সময়ে জনস্বার্থে নেওয়া সকল সিদ্ধান্ত বা কাজ ভবিষ্যতের বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য মার্জনা করা হলো। ভবিষ্যতে অবৈধ ক্ষমতা দখল রোধ করতে জাতীয় সংসদ সংবিধান বা দণ্ডবিধিতে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর সংজ্ঞা ও শাস্তি নির্ধারণ করতে পারে। সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সবজি ব্যবসায়ী সিদ্দিক আহমেদ বাদী হয়ে গত ২৪ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছিলেন। রিটে সামরিক আদালতের দেওয়া ওই রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। একই সঙ্গে হত্যা মামলার পুনর্বিচার দাবি করা হয়। রিটে সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জারি করা সামরিক ফরমানের সাংবিধানিক বৈধতা দিয়ে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল আদালত এ রায় দেন। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট থেকে ২টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে এ রায় দেওয়া হয়। এর আগে হাইকোর্ট ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট এক রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। ওই রায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খন্দকার মোশতাক আহমদ, আবু সা'দাত মোহাম্মদ সায়েম এবং জিয়াউর রহমানের শাসনকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে গতকালের রায়ে আদালত বলেছেন, খন্দকার মোশতাক আহমদ, আবু সা'দাত মোহাম্মদ সায়েম এবং জিয়াউর রহমানের মতো এরশাদও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী। তার এ কাজকে কিছুতেই মার্জনা করা যায় না। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী হিসেবে এরশাদ তার দায় এড়াতে পারেন না। অবৈধ দখলকারীকে শাস্তি পেতেই হবে। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী রায়ের আলোকে এ ধরনের অবৈধ দখলকারীকে উপযুক্ত শাস্তি (সুইটেবল পানিশ) দেওয়া যেতে পারে। এ ব্যাপারে সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারবে। রায়ে আরও বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদে মুজিবনগর সরকার গঠন থেকে সংবিধান কার্যকর করার সময় পর্যন্ত সমস্ত কাজকে ক্রান্তিকালীন বিধান হিসেবে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। ওই অনুচ্ছেদে আর কোনো বিধান যুক্ত করার পথ চিরতরে বন্ধ করা হলো। আদালত রায়ে বলেছেন, সংবিধানে সামরিক আইনের কোনো বিধান নেই। তাই সামরিক আইন জারি অবৈধ। কোনো সংসদ সংবিধান পরিপন্থী কোনো আইন পাস করতে পারে না, বৈধতা দিতেও পারে না। সামরিক আইন আদেশ অবৈধ হওয়ায় এর অধীনে জারি করা সমস্ত কাজ, ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা এবং সেই আদালতে বিচার অবৈধ। আদালত বলেছেন, সংবিধান জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। এ আইনের ওপর সামরিক আইনসহ কোনো আইনের অবস্থান হতে পারে না। খন্দকার মোশতাক আহমদ ও জেনারেল জিয়া সামরিক ফরমানবলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধানের যে মূল নীতি করা হয়েছিল তা পরিবর্তন করেন। জিয়া ক্ষমতায় আসার পর ক্যাঙ্গারু আদালতের মাধ্যমে বিচার করে মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল তাহেরসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে। এই অপকীর্তিকে মার্জনা করা যায় না। জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরি হিসেবে জেনারেল এরশাদ বিচারপতি সাত্তারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেন। এরশাদ ক্ষমতা দখল করে সংবিধান স্থগিত করেন। ১৯৮৬ সালে সংসদ গঠিত হলে ওই সংসদে এরশাদের সমস্ত সামরিক ফরমান ও কাজের বৈধতা দেওয়ার জন্য সপ্তম সংশোধনী পাস করা হয়। রায় ঘোষণার সময় রাষ্ট্রপক্ষের কেঁৗসুলি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এমকে রহমান ও মুরাদ রেজাসহ অন্যান্য আইন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আদালতের পরামর্শে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও আবদুল মতিন খসরু। গতকাল আদালত রায় দেওয়ার সময় মহান ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বীর শহীদদের কথা স্মরণ করে বলা হয়, পাকিস্তানি বাহিনী মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তারা '৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করেছে। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীসহ বিশ্বের অন্য নেতাদের চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি দেশে এসে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী হন। রাষ্ট্রের চারটি মূলনীতি তৈরি করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিদেশি শক্তির সহায়তায় কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য হত্যা করে। স্পিকার বা ভাইস প্রেসিডেন্ট না হয়েও খন্দকার মোশতাক আহমদ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন। খন্দকার মোশতাকের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। রাষ্ট্রের চার মূলনীতি পরিবর্তন করা হয়। জিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধানে নেওয়া মূলনীতি উঠিয়ে দিলেন। পরে জিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের জন্য জয়বাংলা স্লোগানকে বাতিল ঘোষণা করেন। জিয়া বাংলাদেশের সরকারি টেলিভিশন ও বেতারের নাম পরিবর্তন করেন। রায়ে বলা হয়েছে_ পাকিস্তানপন্থী শাহ আজিজুর রহমানকে জিয়া প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। এছাড়া কর্নেল মুস্তাফিজুর রহমানসহ পাকিস্তানপন্থি অনেককে পুনর্বাসিত করেন জিয়া। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসিত করতে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছেন। সুযোগ করে দিয়েছেন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার। জিয়া খন্দকার মোশতাকের সহায়তায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের পথ বন্ধ করে ছিলেন বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে আরও বলা হয়, এরশাদ রাষ্ট্রপতি সাত্তারের কাছ থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। তখন তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন জাতির প্রয়োজনে তিনি ক্ষমতা নিয়েছেন। কিন্তু কেউ তাকে ক্ষমতা দখল করতে ডেকে আনেননি। এরপর এরশাদ সংবিধান স্থগিত করেছেন। সামরিক আইন জারি করেছেন। মৌলিক অধিকার স্থগিত করেছেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৬ সালে সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে এগুলো বৈধ করেছেন। হাইকোর্টের দেওয়া রায়কে যুগান্তকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সামরিক শাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে জিয়া ও এরশাদ দু'জনেই অন্যায় করেছেন। তবে এরশাদের চেয়ে জিয়ার অন্যায় গুরুতর। হাইকোর্ট তার রায়ে '৮২ সাল থেকে '৮৬ সাল পর্যন্ত জারি করা সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সকল কর্মকাণ্ড অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এরশাদের বিরুদ্ধে কী শাস্তি হবে_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর রায়ের আলোকে সংসদ তার শাস্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। সব সামরিক শাসকের শাস্তি হওয়া উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। রিট আবেদনকারীর পক্ষের কেঁৗসুলি হাসান এসএম আজিম রায়কে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বলেন, দেশে দু'বার সামরিক শাসন জারি হয়েছিল। প্রথম সামরিক ফরমানের মাধ্যমে করা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে এরশাদের সামরিক শাসন অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে '৮২ থেকে '৮৬ সাল পর্যন্ত জারি করা সকল কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগের দিন বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান চূড়ান্ত শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে এরশাদ ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। এজন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত। সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের শুনানিতে তিনি এমন মত প্রকাশ করেন। এপিপি রিপোর্ট : ফেব্রুয়ারি ছাড়া শহীদ মিনারের মূল বেদীতে সব ধরনের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেছেন উচ্চআদালত। একই সঙ্গে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শহীদ মিনারের পবিত্র রক্ষার নির্দেশ চেয়ে দায়ের করা একটি রিটের শুনানি শেষে আজ বুধবার বিচারপতি মো. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি নাঈমা হায়দারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব নির্দেশ দেন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওইদিনই শহীদ মিনারের পবিত্রতা কেন রক্ষা করা হবে না জানতে চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি চার সপ্তাহের রুল জারি করেন। রুলের শুনানি শেষে উচ্চআদালত সব শহীদ মিনারের মূল বেদীতে ফেব্রুয়ারি ছাড়া অন্য কোনো মাসে জনসমাবেশ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, সভা-সেমিনার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। পাশাপাশি সব শহীদ মিনারে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সার্বক্ষণিক তিনজন নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগের নির্দেশও দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণেরও নির্দেশ দেন উচ্চআদালত। এছাড়া ’৫২-র ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের রাষ্ট্রীয় পদক দেওয়া এবং আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তাদের তালিকা প্রকাশ, যেকোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে ভাষাসৈনিকদের আমন্ত্রণ জানানো এবং ভাষাসৈনিকরা রাষ্ট্রের কাছে কোনো আর্থিক সহায়তা চাইলে যতদূর সম্ভব তা দেওয়ারও নির্দেশ দেন। হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে সংগঠনটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ শুনানিতে অংশ নেন। এপিপি রিপোর্ট : মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গোপন বিচারের নথিপত্র তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে মামলার সব রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে স্বরাষ্ট্র সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব এবং আইজি প্রিজনসহ সাতজনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চোধুরী ও শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেনের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। রিটটি দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তাহেরের ভাই অধ্যাপক ড.আনোয়ার হোসেন, কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের এবং তাহেরের আরেক ভাই আবু ইউসুফের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ। ১৯৭৬ সালের মার্শাল ল’ রেগুলেশন ১৬ এর আওতায় ওই বিচার ও শাস্তি কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত। রিটকারীদের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘ ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়া হয়। সেই ফাঁসির প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত গোপন। এছাড়া ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রাখা হয়নি।’ বিচারের এই গোপনীয়তা এবং আপিলের সুযোগ না থাকার বিধানকে মধ্যযুগীয় বিচার ব্যবস্থা বলেও মত দেন তিনি। আদালতের নির্দেশের পর রিটকারিদের একজন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ ঐতিহাসিক দিন। ৩৪ বছর পর আমাদের আর্জি গ্রহণ করেছেন উচ্চ আদালত। আমরা আদালতের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের বাবা-মা বেঁচে থাকলে তারা খুব খুশি হতেন। তারা মৃত্যুর সময় দেখেছেন তাদের ছেলের নামে রাষ্ট্রদোহের অভিযোগ রয়েছে।’ হাইকোর্ট এপিপি রিপোর্ট : কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরকা পরা বাধ্যতামূলক না করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে মেয়েদের বিরত না রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়। রোববার বিচারপতি এএইচএম সামসুদ্দিন চৌধুরী ও শেখ মো. জাকির হোসেনের বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। আদালত বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে সরকারের শিক্ষাসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, সমাজকল্যাণসচিব এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের প্রতি রুল জারি করেন। সম্প্রতি নাটোরের রানী ভবানী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক কলেজের ছাত্রীদের জন্য বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করেন এবং তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। রোববার একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদটি প্রকাশিত হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক এবং এম হাফিজুল আলম হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত কলেজটির অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হককে আগামী ২৬ আগস্ট আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করারও নির্দেশ দিয়েছেন। |
নিউজ সার্চ
All
নিউজ আর্কাইভ
May 2018
|